রেডমিট কি ক্ষতিকর, কতটুকু খাবেন

‘রেডমিট’ শব্দটি শুনলেই আমরা মনে করি, এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আসলেই কি তাই?

গরু বা ছাগলের মাংস খেতে আমরা প্রায় সবাই পছন্দ করি। মানবদেহের দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্যও খাদ্যতালিকায় জায়গা দেওয়া হয় রেডমিট বা লাল মাংস।

গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাংসকে রেডমিট বলা হয়। 'রেডমিট' শব্দটি শুনলেই আমরা মনে করি, এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

চলুন আজ জেনে নেই রেডমিট স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর কি না; ক্ষতিকর হলে, তা কতটা ক্ষতি করে এবং কতটুকু রেডমিট খাওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিরপুর জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তারানা জান্নাত মুমু।

রেডমিট প্রাণীজ প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি১২ এর অন্যতম উৎস। এ ছাড়া, রেডমিটে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিড থাকে।

রেডমিটের মাধ্যমে খুব সহজেই দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। এটি শরীরের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে ভূমিকা রাখে। সার্বিকভাবে রেডমিট স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে, যদি মাংসের চর্বি বাদ দিয়ে ছোট ছোট টুকরা করে খাওয়া যায়।

কম চর্বিযুক্ত রেডমিড শিশু, কিশোর, তরুণ ও গর্ভবতী নারীর জন্য পুষ্টিকর খাবার। তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রেডমিট রাখা যাবে না। সপ্তাহে একদিন বা দুদিনের বেশি এবং একসঙ্গে ২-৩ ছোট টুকরার বেশি রেডমিট খাওয়া যাবে না।

একজন সুস্থ ব্যক্তি একদিনে ৮৫ গ্রাম রেডমিট গ্রহণ করতে পারেন কোনো সমস্যা ছাড়াই। এবং মাংস চর্বিমুক্ত হলে ১০০ গ্রামও খেতে পারবেন।

রেডমিট খাওয়ার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

যেমন:

১. রেডমিটে প্রচুর এলডিএল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড থাকায় রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

২. স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকায় রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি করে, যার কারণে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত রেডমিট খেলে বদহজম হতে পারে, গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা বেড়ে যায়।

৪. টাইপ-টু ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৫. বৃহদান্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত, পাকস্থলি, কোলন, প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৬. আর্থাইটিস ও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৭. শরীরে ক্ষতিকর ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে।

৮. শরীরে ফ্যাট জমে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের রেডমিট  পরিহার করা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে।

রেডমিট রান্না করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করলে গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমে যাবে।

মাংস পুড়িয়ে বা অতিরিক্ত তেল-মশলা দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে রান্না করা হলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বারবার গরম করা মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য একদমই ভালো না। এগুলো হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে ক্রমশ বাড়িয়ে তোলে।

 

Comments