বরিশালের যে সন্দেশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না

গুঠিয়ার সন্দেশ
বিখ্যাত গুঠিয়ার সন্দেশ। ছবি: টিটু দাস/স্টার

বরিশাল নগরী থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বানারীপাড়া উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়ন। স্থানটি কৃষি উৎপাদনের জন্য পরিচিত। তবে ভোজনরসিক ও মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে এই জায়গাটি পরিচিত সুস্বাদু এক সন্দেশের জন্য, যার নাম 'গুঠিয়ার সন্দেশ'।

আগে মাত্র একটি দোকান থাকলেও চাহিদার কারণে আরও অন্তত ৬-৭টি সন্দেশের দোকান গুঠিয়া বাজারে গড়ে উঠেছে। শুধু গুঠিয়া ইউনিয়ন নয়, জেলার অন্যতম জনপ্রিয় এই মিষ্টি নগরীর বিভিন্ন মিষ্টির দোকানেও পাওয়া যায়। বরিশাল গেলে এর স্বাদ নিতে ভোলেন না খাদ্যরসিকরা।

গুঠিয়ার সন্দেশ
ছবি: টিটু দাস/ স্টার

কথা হয় গুঠিয়ার সন্দেশের কারিগরদের সঙ্গে। তারা জানান, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া থেকে সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে আসেন সতীশ চন্দ্র দাস নামের এক মিষ্টান্ন কারিগর। পরে সেই অভিজ্ঞতা আর কিছুটা নিজের কৌশল দিয়ে তিনি ১৯৬২ সালে তৈরি করেন এই সন্দেশ, যা এখন গুঠিয়ার সন্দেশ নামে পরিচিত। সতীশ চন্দ্রের পরে তার আত্মীয় পরিমল চন্দ্র ভদ্র তৈরি করেন এই সন্দেশ। এখন তার আত্মীয় সঞ্জয় চন্দ্র ভদ্র সন্দেশ তৈরি করছেন।

সঞ্জয় চন্দ্র জানান, সন্দেশ বানানোর প্রণালী খুব সহজ। দুধের ছানার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে তৈরি হয় এটি। পরে কিশমিশ দেওয়া হয়। এই সন্দেশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর স্বাদ ও গন্ধ। সন্দেশ থেকে দুধের চমৎকার সুঘ্রাণ আসে। এ ছাড়া এই সন্দেশ কড়া পাকের হওয়ায় ও আকৃতিতে ভিন্ন হওয়ায় নজর কাড়ে সবার।

বর্তমানে প্রতি কেজি সন্দেশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। এক কেজিতে ৩৫-৩৭টা পর্যন্ত সন্দেশ পাওয়া যায়। এই সন্দেশের আরেক বিখ্যাত কারিগর বাদশা হওলাদারের বয়স হয়ে যাওয়ায় তার ছেলে শাওন হাওলাদার সন্দেশ তৈরি করে থাকেন এখন।

তিনি জানান, সাধারণত ৫-৬ কেজি দুধে ১ কেজি ছানা পাওয়া যায়। সেই ছানার সঙ্গে ১ কেজি চিনি মিশিয়ে অল্প আগুনে জ্বাল দিতে হয়। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পাকিয়ে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখলেই কাঁচামাল তৈরি। তা পরিমাণমতো নিয়ে কাঠের ওপর রেখে সন্দেশের আকার দেওয়া হয়।

শাওন হাওলাদার বলেন, 'দুধ, চিনি এবং শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এখন খুব বেশি লাভ হয় না। তবু ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মানের সঙ্গে আপস করি না।'

স্থানীয় ক্রেতা মইনুল ইসলাম জানান, বিয়ে, জন্মদিনসহ স্থানীয়দের যে কোনো উৎসবে গুঠিয়ার সন্দেশের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকেও ক্রেতারা এই মিষ্টি কিনে নিয়ে যান।

বরিশাল মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, 'এই সন্দেশ সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। তবে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা না থাকায় সবাই এই মিষ্টি প্রস্তুত করতে পারেন না। প্রতিদিন ৫০০ কেজির বেশি চাহিদা থাকলেও উৎপাদন অর্ধেকের চেয়েও কম।'

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, 'গুঠিয়ার সন্দেশ ইতোমধ্যে জেলার খাদ্যতালিকায় ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। মিষ্টান্ন কারিগররা চাইলে এর প্রসারে বিসিক ট্রেনিং দিতে পারে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

5h ago