আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে

বাংলাদেশে আইইএলটিএস টেস্ট নিয়ে থাকে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) এডুকেশন।
আইইএলটিএস নিবন্ধন
ছবি: সংগৃহীত

ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রমিত নিরীক্ষণ পদ্ধতি ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম সংক্ষেপে আইইএলটিএস। বিদেশে উচ্চশিক্ষা, চাকরিসহ নানা কারণে অভিবাসনের পূর্বশর্ত হিসেবে উত্তীর্ণ হতে হয় এই পরীক্ষায়। ইংরেজি ভাষাভাষি দেশগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য ভাষার রাষ্ট্রগুলোও আইইএলটিএস স্কোরকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের বহুজাতি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে এই যোগ্যতাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলুন জেনে নিই কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন।

আইইএলটিএস নিবন্ধনের জন্য যা জানা জরুরি

বাংলাদেশে আইইএলটিএস টেস্ট নিয়ে থাকে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) এডুকেশন। দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরেই এই প্রতিষ্ঠান দুটির একাধিক কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোতে সশরীরে নিবন্ধন করে টেস্টগুলোতে অংশগ্রহণ করা যায়। প্রতি মাসেই পূর্ব নির্ধারিত নির্দিষ্ট তারিখগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন মডিউলের পরীক্ষা।

মূলত একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং (জিটি)- এই দুই ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন নেওয়া হয়ে থাকে। যদি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়, তাহলে ক্যাটাগরি হবে একাডেমিক। আর চাকরি বা অন্য কারণে অভিবাসন প্রার্থীদের জিটি নির্বাচন করতে হবে। পরীক্ষা কম্পিউটারে অথবা সরাসরি কাগজে (চিরাচরিত পরীক্ষা পদ্ধতি) দেওয়া যায়। কম্পিউটার বেইজ্ড টেস্টের ক্ষেত্রে স্কোর পেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৫ দিন। অপরদিকে, পেপার বেইজ্ড টেস্টের ফলাফল আসতে প্রায় ২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও বৈধ পাসপোর্ট ছাড়া আর কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না। কম্পিউটার বা কাগুজে এবং একাডেমিক বা জেনারেল, সবক্ষেত্রে আইইএলটিএস টেস্টের জন্য বর্তমান নিবন্ধন ফি ২২ হাজার ৫০০ টাকা।

ধাপে ধাপে আইইএলটিএস পরীক্ষার নিবন্ধন পদ্ধতি

ব্রিটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএস নিবন্ধন

টেস্ট টেকার পোর্টালে অ্যাকাউন্ট তৈরি

শুরুতেই https://eamidentity.britishcouncil.org/account/login- লিংকে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ওয়েবসাইটের এই অংশটির নাম টেস্ট টেকার পোর্টাল। এখানে প্রয়োজন হবে প্রার্থীর নাম, জন্ম তারিখ এবং একটি ই-মেইল ঠিকানা। তারপর একটি অনন্য পাসওয়ার্ড দিয়ে এবং নিবন্ধনের শর্তাবলীতে সম্মতি সূচক টিক চিহ্ন দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হবে অ্যাকাউন্ট তৈরির কাজ।

এই পোর্টালে অ্যাকাউন্ট করার সুবিধা হলো- পুরো নিবন্ধন একবারে না করে প্রার্থী প্রয়োজনমতো বিরতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এ ছাড়া পরে আইইএলটিএস স্কোর চেক করা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিআরএফ (টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম) পাঠানো যাবে এই পোর্টালের মাধ্যমে।

টেস্ট ক্যাটাগরি নির্বাচন

লগইনের পর স্ক্রিনের উপরের বাম কোণে 'বুক নিউ টেস্ট'এ ক্লিক করতে হবে। এরপর আসবে টেস্ট ক্যাটাগরি নির্বাচনের পালা। একাডেমিক বা জেনারেল ট্রেনিং থেকে যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে। পরের ধাপে দেশ ও বিভাগ নির্বাচনের পর ফরম্যাট হিসেবে কাগুজে বা কম্পিউটার বেইজ্ড যে কোনো একটি বাছাই করতে হবে।

প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে অ্যাক্সেসিবিলিটি রিকোয়ারমেন্ট বিকল্প। এই ক্যাটাগরিতে তাদের জন্য স্ক্রাইব, সহায়ক প্রযুক্তি, পরিবর্তিত শ্রবণ সিডি, শ্রবণ প্রতিবন্ধী সংস্করণ বা পরীক্ষার স্থানে শ্রবণসহায়ক ডিভাইস বহন করার সুযোগ থাকে।

বিভিন্ন মডিউলের টেস্টগুলো দেখার জন্য প্রথমে কাঙ্ক্ষিত তারিখটি বেছে নিতে হবে। বাছাই করা নির্দিষ্ট তারিখে ভেন্যু ও নিবন্ধন ফিসহ দিনের বিভিন্ন সময়ের টেস্টগুলো দেখা যাবে। এগুলোর মধ্য থেকে পছন্দসই সময় ও ভেন্যু অনুযায়ী 'বুক টেস্ট'-এ ক্লিক করে টেস্ট বাছাই করা যাবে।

প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র সরবরাহ

পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদনের এই মূল ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হবে। এখানে মাতৃভাষা ও টেস্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য যোগ করতে হয়। অতঃপর সংযুক্তি হিসেবে আপলোডের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে পাসপোর্ট বা এনআইডি কার্ডের স্ক্যান কপি। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ যদি কাছাকাছি থাকে, তবে আইইএলটিএসে নিবন্ধনের আগেই রিনিউ করে নেওয়া আবশ্যক।

রিভিউ সেকশন

এ পর্যায়ে পরীক্ষার তারিখ, পাসপোর্ট এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুক্ষ্মভাবে যাচাই করতে হয়। কোনো ভুল হলে এটিই সঠিক ধাপ তা পরিবর্তন করার।

নিবন্ধন ফি পরিশোধ

এখানে প্রার্থী তাৎক্ষণিকভাবে কিংবা পরবর্তীতে অন্য যে কোনো সময়ে ফি পরিশোধ করতে পারেন। ঘরে বসেই ফি পরিশোধের জন্য রয়েছে কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং-এর মতো অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম। এগুলোর মধ্য থেকে সুবিধাজনক উপায়টি নির্বাচন করে তার যাবতীয় বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। ফি সফলভাবে পরিশোধ হলে প্রার্থীর ই-মেইল ঠিকানায় ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে একটি নিশ্চিতকরণ ই-মেইল পাঠানো হবে।

আইডিপিতে আইইএলটিএস নিবন্ধন

অ্যাকাউন্ট তৈরি

আইডিপির ক্ষেত্রে প্রথমে https://book.ielts.idp.com/account লিংকে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট  খুলতে হবে। অনলাইনে যে কোনো সাধারণ অ্যাকাউন্ট খোলার মতোই এখানেও প্রয়োজন হবে নাম, জন্ম তারিখ, ই-মেইল ঠিকানা ও পাসওয়ার্ড।

টেস্টের ধরন ও তারিখ নির্ধারণ

ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইনের পর https://ielts.idp.com/ লিংক থেকে যেতে হবে স্ক্রিনের ওপরে ডান দিকের 'বুক নাও' অপশনে। এর মাধ্যমে শুরু হবে আইইএলটিএস সেশন খোঁজার জন্য প্রাথমিক প্রক্রিয়া, যেটি চারটি সাব-সেকশন নিয়ে গঠিত।

প্রথমে টাইপ সাব-সেকশন থেকে একাডেমিক বা জিটি-এর যে কোনো একটি নির্বাচন করতে হবে। তারপরের স্ক্রিনটি হচ্ছে টেস্ট ফরম্যাটের, যেখানে কাগুজে বা কম্পিউটার টেস্ট- যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। এরপরের স্ক্রিনে ড্রপ ডাউন লিস্ট থেকে দেশ ও শহরের নাম ঠিক করে দিতে হবে। সবশেষের স্ক্রিনে টেস্ট ডেট বাছাইয়ের পর যেতে হবে 'ফাইন্ড সেশন'-এ।

নির্দিষ্ট ভেন্যুতে আইইএলটিএস সেশন নির্বাচন

'ফাইন্ড সেশন' অপশনটি বাছাইকৃত তারিখের ভেন্যুসহ বিভিন্ন সময়ের টেস্টগুলো দেখাবে। সেখান থেকে উপযুক্ত সেশনটিতে ক্লিক করার পর শুরু হবে নিবন্ধনের চূড়ান্ত পর্যায়। এটি ৫টি অংশে বিভক্ত: সিলেক্ট টেস্ট ডেট, অ্যাকাউন্ট, রিভিউ, কমপ্লিট পেমেন্ট এবং ফাইনালাইজ বুকিং।

টেস্টের সময় নির্ধারণ

মূল সেশন লিস্টে তারিখ, সময় ও ভেন্যু সবই উল্লেখ থাকে। সিলেক্ট টেস্ট ডেট সাব-সেকশনটিতে পৃথকভাবে শুধু সময় পরিবর্তনের সুযোগ থাকে।

অ্যাকাউন্ট ও রিভিউ

এ অংশে ব্যক্তিগত বিবরণ ও পাসপোর্টের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হয়। রিভিউ অংশে এতক্ষণ পর্যন্ত সরবরাহকৃত যাবতীয় তথ্য পুনরায় এক নজরে প্রদর্শিত হয়। এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করা যায়।

পরীক্ষার ফি পরিশোধ

নিবন্ধনের এই সর্বশেষ সেকশনটি অনলাইন পরিশোধের জন্য। এর মাধ্যমে একটি টেস্ট চূড়ান্ত হয়। ফি সফলভাবে পরিশোধের ভিত্তিতে টেস্টের যাবতীয় তথ্যসহ একটি ই-মেইল প্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধন পদ্ধতি শেষ হয়।

এই পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো আইইএলটিএস পরীক্ষার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহজ ও সাবলীলতা নিশ্চিত করে। তবে নিবন্ধন করার আগে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি যথাযথ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে নেওয়া উচিত। এতে করে সেই লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে পরীক্ষার দিনক্ষণগুলো ঠিক করা যাবে। তার মধ্যে সর্বপ্রথম পাসপোর্টের বৈধতা নিশ্চিত করে নেওয়া জরুরি। পরীক্ষার কেন্দ্র ও সময় একবার নির্ধারণের পর প্রয়োজনে তা সম্পাদনের সুযোগ রয়েছে। তবে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রস্তুতি অনুযায়ী পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত স্কোর অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

 

Comments