চাকরির মেয়াদ শেষের ৩ দিন আগে বিদেশ সফরে গণপূর্ত সচিব

গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে একই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বহাল আছেন। এই চুক্তিও শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ৯ মার্চ। 

অথচ গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তিনি সরকারি সফরে ফ্রান্সের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। আর দেশে ফিরবেন ১১ মার্চ, চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ দিন পর। 

১১ মার্চ চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও, আগামীকাল বৃহস্পতিবার কাজী ওয়াছি উদ্দিনের শেষ কার্যদিবস। 

এর মধ্যেই আজ বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নবীরুল ইসলামকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার। তার নিয়োগের আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠেয় 'বিল্ডিং ক্লাইমেট গ্লোবাল ফোরাম' শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ টাউন প্ল্যানার আশরাফুল ইসলাম। 

শাহজালাল বিমানবন্দরে তাদের ভিআইপি লাউঞ্জ সুবিধা ব্যবহারের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে গত ৪ মার্চ একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে ৬ মার্চ তাদের যাত্রার সময় এবং ১১ মার্চ সকাল ৯টায় দেশে ফেরার সময় ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার ও প্রাপ্য আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৩ অধিশাখার উপসচিব ফরিদা ইয়াসমিন এ চিঠিতে সই করেছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উনি (ওয়াছি উদ্দিন) সচিব হিসেবে সফরে গেছেন, আসার সময় যদি পদ নাও থাকে, তিনি পিআরএলে আরো এক বছর তার বর্তমান সুবিধাদি পাবেন। এক্ষেত্রে বিমানবন্দরে সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় হবে না।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা খুবই দুঃখজনক। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা হয়েও তারা এমন সব নজির গড়ে যাচ্ছেন, যার জন্য পুরো প্রশাসনকে লজ্জায় পড়তে হচ্ছে।'

আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'এটা তো সামান্য বিষয়, ভেতরে খবর নিয়ে দেখেন, আরও অনেক কিছু পাবেন।'

শুধু সচিব নন, একই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফ্রান্সে যাওয়ার কথা আছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীরও। 

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান, রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা আছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ছাড়া একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে একই অনুষ্ঠানের উদ্দেশে বিদেশ সফরে না যেতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন আছে।

প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, দেশ আর্থিক সংকটে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি তো বটেই, বেসরকারি পর্যায়ে পর্যন্ত কৃচ্ছ্রসাধনের আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা হয়ে সচিব সেই নির্দেশনা মানছেন না, এমনটা হওয়া উচিত নয়। 

জানতে চাইলে সাবেক সচিব বদিউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যা দেখতেছি, তাতে মনে হচ্ছে কোথাও জবাবদিহি নেই। একজন সচিব অবসরে যাওয়ার ৩ দিন আগে তাকে এমন একটি অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কেন অনুমতি দিল সরকার? সরকার অনুমোদন না দিলে কি সচিব যেতে পারতেন?'

তিনি আরও বলেন, 'এগুলো নতুন হচ্ছে যে তা নয়, এখন অনলাইনে প্রকাশ হয় বলে আপনারা (গণমাধ্যম) কিছু জানতে পারেন, ভেতরে ভেতরে আরও কত কিছু হয় জানলে দেশবাসীর চোখ কপাল ছাড়িয়ে যেতে পারে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago