‘সারা বাংলাদেশ আমাদের জন্য দোয়া করেছে এটাই বড় শক্তি ছিল’

বন্দরে নেমেই মাকে জড়িয়ে ধরেন এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক শামসুদ্দিন। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়ল লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মণি-৩। জাহাজে অপেক্ষারত এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিক নুর উদ্দিনের যেন রোদে কষ্ট না হয়, সেজন্য নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে কালো ক্যাপ পাঠান স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।    

জান্নাতুলের সঙ্গে ছিল তাদের আড়াই বছরের ছেলে সাদ বিন নূর।  জান্নাতুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামী আমাদের ফিরে এসেছেন, এটাই বড় পাওয়া। ভাবিনি তাকে আবার দেখতে পাব। নতুন করেন জীবন পাওয়া এটা আমাদের জন্য।'

জেটিতে নেমেই ছেলেকে কোলে তুলে চুমু খান নুর উদ্দিন। 

বিকেল ৪টায় জাহাজ জেটিতে ভেড়ার পর একে একে নেমে আসেন এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। ছবি: স্টার

সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির এক মাস পর আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে পৌঁছান নুর উদ্দিনসহ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। এমভি জাহান মণি-৩ লাইটার জাহাজে করে আসেন তারা।

বন্দরে নেমেই এমভি আব্দুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা আতিকউল্লাহ খান দুই মেয়ে ইয়াশরা ফাতেমা ও উনাইয়া মাহবিনকে জড়িয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। 

জেটিতে নামার অপেক্ষায় এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। ছবি: স্টার

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক বেশি খুশি, অনেক বেশি আনন্দিত। সারা বাংলাদেশ আমাদের জন্য দোয়া করেছে এটাই সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমাদের।

'আমার মেয়েরা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে পেরেছে, এটাই আমার সবথেকে বড় পাওয়া। আমি আনন্দিত,' বলেন তিনি।

দস্যুর কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'যেদিন জলদস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যাবে, সেদিন তারা অনেক বেশি অস্থির ছিল, তারা ইনসিকিউর ফিল করছিল। নিরাপদে পালিয়ে যাওয়াই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য।'

'যাওয়ার সময় আমি শুধু তাদের একটা কথাই বলেছি, আমরা তোমাদের আর কখনোই দেখতে চাই না,' বলেন আতিকুল্লাহ।

দুপুর দুইটা থেকে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মা জোৎস্না বেগম। ছেলে তানভীর আহমেদ জাহাজ থেকে নেমেই মাকে জড়িয়ে ধরেন। 

তানভীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক মাস আগে বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হলেও রাতে ঘুমাতে পারিনি। জলদস্যুদের আচরণ ছিল খুবই ভয়ংকর।'

জোৎস্না বেগম বলেন, 'গত দুই মাস আমাদের কোনো আনন্দ ছিল না। সারাক্ষণ এই মনে ভয় কাজ করছিল। ছেলেকে দেখে আজ ঈদের আনন্দ পাচ্ছি।'  

এমভি আবদুল্লাহর নাবিক শামসুদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, '৪০-৫০ জন জলদস্যুদের হাতে একে-৪৭। তারা যখন আমাদের গান পয়েন্টে নিল, তখন মনে হয়েছিল আজই শেষ দিন।'

মুক্ত নাবিকরা হলেন-এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ, প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রুকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ ও ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান।

অপর নাবিকরা হলেন-ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মো. আনওয়ারুল হক, মো. আসিফ উর রহিম, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আইনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ, মো. শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নুর উদ্দিন।

বিকেল ৪টার দিকে এমভি জাহান মনি-৩ লাইটার জাহাজ এই ২৩ নাবিকদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ১ নম্বর জেটিতে ভেড়ে। নাবিকদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দিতে প্রস্তুত ছিল বন্দর। স্বজনরা এসেছিলেন ফুল নিয়ে। 

এ সময় জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ হলো। আমাদের ২৩ নাবিককে সুস্থভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা ছিল। আমাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। আমরা এখন যত দ্রুত সম্ভব নাবিকদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে চাই।'

তিনি আরও বলেন, 'নাবিকরা চাইলে আবারও কাজে ফিরতে পারবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh's exports stuck in EU, US orbit

Non-garment exports struggle with quality standards and logistics bottlenecks

13h ago