ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দল গঠন করবে ছাত্ররা

ফাইল ফটো/ রাজীব রায়হান

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি রাজনৈতিক দল গঠন ও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা।

বাম বা ডানপন্থী মতাদর্শের দিকে না ঝুঁকে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখবে এই রাজনৈতিক দল। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, বাংলাদেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে সব ইস্যু সমাধানের চেষ্টা করবেন তারা। 

নতুন দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। 

তবে এই দুই প্ল্যাটফর্ম বিলুপ্ত হচ্ছে না। তারা 'প্রেশার গ্রুপ' হিসেবে থেকে যাবে। 

এই দুই প্ল্যাটফর্মের তিন শীর্ষ নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান। কিন্তু বিষয়টি এখনো পরিকল্পনা পর্যায়ে থাকায় তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।

তারা জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে নতুন এই দলে। 

নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত হবেন না। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নেবেন।

'দুই প্ল্যাটফর্ম থেকে যারা নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে আগ্রহী, তাদের দলে জায়গা দেওয়া হবে,' বলেন এক নেতা।

বর্তমানে জেলা ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কমিটি গঠন করছে এই দুই প্ল্যাটফর্ম।

গত ২২ অক্টোবর হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফ সোহেল, আবদুল হান্নান মাসুদ ও উমামা ফাতিমাকে নিয়ে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

এই ছাত্র সংগঠন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি যথাক্রমে ১২ এবং ১৫টি জেলা কমিটি ঘোষণা করেছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন রাজনৈতিক দলটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে এবং জেতার সম্ভাবনা আছে এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে। ইতোমধ্যে প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তারা।

নাগরিক কমিটির এক শীর্ষ নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য জাতীয় ব্যক্তিত্বদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো। জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন জাতীয় মুখ তৈরিতেও কাজ করে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমরা প্রতিটি আসনে নেতৃত্ব গড়ে তুলছি। এসব কৌশল অনুসরণ করে আমরা আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং জয়ের পরিকল্পনা করছি।' 

তারা প্রাথমিকভাবে দলের একটি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন। নির্বাচনের আগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হবে। 

দুই প্ল্যাটফর্মের নেতারা জানান, তারা এদেশে বহু বছর ধরে প্রচলিত বিভাজনের রাজনীতি এবং পাল্টাপাল্টি বয়ানের বাইরে যেতে চান।

মূলত এজেন্ডাভিত্তিক রাজনীতি এবং বেকারত্ব, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় ঐক্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিতে চান তারা।  

'আমরা জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং চাকরির সুযোগ তৈরির ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক আলোচনা চাই। বিভাজনের রাজনীতি থেকে সরে আসতে চাই,' বলেন নাগরিক কমিটির এক নেতা।

তিনি আরও বলেন, '১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪-এর চেতনার' ওপর ভিত্তি করে এই দল গড়ে তোলা হবে। 

নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতের দিকেও জোর দেবে এই রাজনৈতিক দল। 

'একটি কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য সকল স্তরে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন, কেবল নামমাত্র ভূমিকায় থাকলে চলবে না,' বলেন নাগরিক কমিটির এক নেতা।

নতুন এই রাজনৈতিক শক্তি দলের ভেতরেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

তিনি জানান, দলটি যদি কোনোভাবে কর্তৃত্ববাদী বা ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে, তখন নাগরিক কমিটি তাদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে।

তবে নতুন এই দলে যোগ দিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং সেসব দলের অতীত ভুলগুলোর সমালোচনা করার মানসিকতা থাকতে হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, তার সংগঠন মূলত একটি সিভিল সোসাইটি প্ল্যাটফর্ম, যা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করে।

'এটি ভবিষ্যতেও একইভাবে কাজ চালিয়ে যাবে,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি।

তিনি স্বীকার করেন, নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। তবে এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনার কথা জানাননি তিনি। 

নাসীরুদ্দীন বলেন, 'আসল কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। সেটি চিন্তা করেই আমরা এবং বাইরের অনেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভাবছি।'

তিনি আরও বলেন, তারা দুটি প্রধান লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন—ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা নির্মূল এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রণয়ন। 

'লক্ষ্য অর্জনে আমরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, যুব নেতৃত্বকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।  

Comments

The Daily Star  | English

AL govt’s secret surveillance state

From snooping devices carried in backpacks to locate people through their phones to a massive infrastructure that can intercept even end-to-end encryption from a central command centre, the Awami League government had been on an increasingly aggressive trajectory towards building a powerful surveillance state. 

9h ago