সরকার কি নির্বাচনের বল বিএনপির কোর্টে ঠেলে দিলো?

মাহফুজ আনাম, মতামত, নির্বাচন, প্রধান উপদেষ্টা, বিচার বিভাগ, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস,

লন্ডনে ১৩ জুন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের পরে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, ডিসেম্বরে নয়, এপ্রিলেও নয়, বরং আগামী রোজা শুরুর আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।

খবরটি বিএনপিকে আশাবাদী করেছে। দল-মত নির্বিশেষে দেশের সাধারণ মানুষও হয়তো মনে করছে যে, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা ও অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।

প্রশ্ন হলো, এই যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সত্যিই কি নির্বাচনের ধোঁয়াশা কেটে গেলো বা এটি বিশ্বাস করার মতো পরিস্থিতি কি এখনও তৈরি হয়েছে যে, আর আট মাস পারে, অর্থাৎ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে?

এই প্রশ্নের মীমাংসা করতে হলে যৌথ ঘোষণায় উল্লিখিত শব্দগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়া দরকার।

যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, 'জনাব তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার  কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের  রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে।'

এখানে এটি স্পষ্ট যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, প্রধান উপদেষ্টা সে কথা বলেননি। তিনি বলেছেন;

১. নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।

২. সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে।

৩. সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করতে হবে।

অর্থাৎ, যদি এই সময়ের মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায় এবং এই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা যায়, তাহলেই কেবল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। এখানে বলা হয়নি যে 'হবে'। 'হবে' আর 'হতে পারে'র মধ্যে পার্থক্য অনেক। প্রধান উপদেষ্টা 'হতে পারে' বলেছেন হয়তো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দায়িত্ব আইনত নির্বাচন কমিশনের বলে। যে কারণে বৈঠক শেষে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন শিগিগির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। প্রশ্ন হলো, নির্বাচন যদি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হয়, তাহলে ৭-৮ মাস আগে নির্বাচন কমিশন তারিখ ঘোষণা করবে কী করে? নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় সাধারণত দুই-আড়াই মাস আগে। যাই হোক, সেটা অন্য প্রসঙ্গ। আসা যাক ফেব্রুয়ারি প্রসঙ্গে।

বল কি বিএনপির কোর্টে?

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা যে শর্তের কথা বলেছেন, তার মধ্যে দিয়ে তিনি মূলত নির্বাচনের বলটি বিএনপির কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন। কেননা, বিএনপির সঙ্গে সরকারের সাম্প্রতিক দূরত্ব শুধু নির্বাচনের তারিখ ইস্যুতেই নয়, বরং সংস্কার ও জুলাই সনদ ইস্যুতেও বিএনপির যে অবস্থান ও সহযোগিতা সরকার প্রত্যাশা করে, সেখানে যথেষ্ট 'গ্যাপ' আছে বলে  দৃশ্যত মনে হয়। এই গ্যাপ পূরণের দায়িত্বটা এখন বিএনপিকেই নিতে হবে।

বিএনপি যদি সরকারের সংস্কার প্রস্তাবে পুরোপুরি একমত না হয় এবং এ কারণে যদি সংস্কার প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়ে যায়, তাহলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কী করে? সরকার তখন বিএনপির ওপরেই দায় চাপিয়ে বলতে পারবে যে, তারা সংস্কার প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সহযোগিতা করছে না!

বিএনপি এখন পর্যন্ত সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে 'ক্রিটিক্যাল'। তারা যদি এই অবস্থায় অটল থাকে, তাহলে সরকার কি সেটা মানবে? না মানলে বিএনপির সঙ্গে সরকারের দূরত্ব কি আরও বাড়বে?

ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার আসলে কোথায় কতটুকু সংস্কার করতে চায়, তা এখনও পরিষ্কার নয়। গত ১০ মাসে কী কী সংস্কার হলো—তা নিয়েও বিতর্ক আছে। ১১টি সংস্কার কমিশন যে কয়েকশ সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক দফা আলোচনা হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা চলছে। যেসব কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়নি, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী? সরকার কি আলোচনা বা ঐকমত্য ছাড়াই সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে চায় নাকি বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে?

দ্বিতীয়ত, ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার পরে কোন কোন বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলো আর কোন বিষয়গুলোয় এখনও ঐকমত্য হয়নি, আনুষ্ঠানিকভাবে তার কোনো তালিকা সরকার এখনও দেয়নি। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, সেগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী হবে? ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি সরকার প্রধানের ভাষায় 'সংস্কারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন' করা না যায়, তাহলে এর দায় কি বিএনপিকে বহন করতে হবে এবং এই কারণে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে?

যেহেতু বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপিই দ্রুত তথা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিল, ফলে এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার কি তাহলে কিছু শর্ত দিয়ে বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়ায় বিএনপিকে অধিকতর দায়িত্বশীল করে দিলো? অর্থাৎ দ্রুত নির্বাচন চাইলে দ্রুত বিচার ও সংস্কার শেষ করো—এরকম একটি বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দেওয়া হলো কি না এবং সেটি বিএনপির জন্য একটি বড় চাপ তৈরি করবে কি না?

বিচারে অগ্রগতি কার ওপর নির্ভর করে?

সরকার প্রধান বলছেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে গেলে এই সময়ের মধ্যে বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করতে হবে। প্রশ্ন হলো, বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি কার ওপর নির্ভর করে? সরকারের ওপর, বিএনপির ওপর নাকি আদালতের ওপর?

বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বিচার বিলম্বিত হলে সেখানে যেমন অবিচারের ঝুঁকি তৈরি হয়, তেমনি বিচার ঝটপট করারও বিষয় নয়। প্রতিটি অপরাধ প্রমাণ করতে হয়। পর্যাপ্ত এভিডেন্স ও সাক্ষী ছাড়া বিচার তার মনমতো রায় দিতে পারেন না। দিলে সেটি ভবিষ্যতে কোনো না কোনো সময়ে গিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জড হয়। বিতর্কিত হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অনেক অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও যে গণহারে হত্যা মামলা হয়েছে, তার কতটি প্রমাণ করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অথচ প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ আছে। সেসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগেই মামলা দেওয়া যেত।

প্রতিটি মামলায় আসামির সংখ্যা শত শত। নাম উল্লিখিত আসামির বাইরেও আছে হাজার হাজার অজ্ঞাত আসামি। এগুলোর সঠিক তদন্ত এবং অভিযোগপত্র জমা দিতে কত সময় লাগবে, সেটি বিরাট প্রশ্ন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার যে দীর্ঘসূত্রতা এবং মামলার তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে দক্ষতার ঘাটতির কথা প্রমাণিত—সেখানে এরকম অগণিত মামলার বিচারকাজ কি ফেব্রুয়ারির আগে শেষ হয়ে যাবে?

'উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি' বলতে প্রধান উপদেষ্টা কি মামলার রায় বুঝাচ্ছেন নাকি অভিযোগপত্র দাখিল—সেটি পরিষ্কার নয়। যদি অভিযোগপত্র দাখিলকেও মামলার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে ধরা হয়, সেটিও কি এই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে? যদি না হয় তাহলে কি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না? তার চেয়ে বড় কথা, বিচার কাজ কত দ্রুত হবে সেটি নির্ভর করছে আদালতের ওপর। সুতরাং, তদন্তের ধীগরগতি কিংবা বাস্তবিক আরও কিছু কারণে যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হয়, সেজন্য কি বিএনপি বা নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার অন্য কোনো দলকে দায়ী করা যাবে?

বাস্তবতা হলো, সরকারের নীতি-নির্ধারক এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ কিছু নেতার বাইরে বাকিদের বিরুদ্ধে হত্যা বা হত্যার নির্দেশ দানের বিষয়টি প্রমাণ করা বেশ কঠিন হবে এবং যতি সত্যিই এখানে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়; বিচারে যদি আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়, তাহলে যতগুলো মামলা গত ৫ আগস্টের পর থেকে হয়েছে, তাতে আগামী দুই তিন বছরেও সবগুলোর বিচার শেষ করা যাবে কি না সন্দেহ আছে।

বিচার বলতে আদালতের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যেমন অধস্তন আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কোনো রায় দিলে সেটি উচ্চ আদালত এবং তারপরে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির বিষয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, আপিল বিভাগের নিষ্পত্তির পরেও থাকে রিভিউয়ের প্রশ্ন। সুতরাং বিচারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলতে সরকার প্রধান কোন ধাপ পর্যন্ত বুঝিয়েছেন, সেটি পরিষ্কার হওয়া দরকার।

এনসিপি কী বলছে?

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার পথে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান। দলটি এখনও নিবন্ধিত না হলেও এই দলটি যেহেতু গঠিত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে এবং বিভিন্ন সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথায় এই দলটির প্রতি তার একধরনের 'সমর্থন' ও 'সহমর্মিতা' প্রকাশ পেয়েছে—ফলে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার এবং জুলাই সনদ প্রশ্নে এনসিপি কী বলছে, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এনসিপিকে বাইপাস করে বা উপেক্ষা করে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেবে বা নিতে পারবে বলে মনে হয় না।

লন্ডন বৈঠকের পরে এনসিপির তরফে যে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আলাপটিকে ইতিবাচকভাবে নেয়নি। তারা মনে করে, দেশের সিদ্ধান্ত দেশের ভেতরেই হওয়া উচিত ছিল।

শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে এনসিপির ফেসবুক পেইজে দলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়: বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে।

এনসপি মনে করে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ব্যতীত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণঅভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জনআকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে। জনগণের দাবি তথা 'জুলাই সনদ' রচনা ও কার্যকর করার পূর্বে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে, তা জনগণ মেনে নেবে না।

একই সময়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন: 'এই সরকার শুধুমাত্র নির্বাচন দেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো রূপ নয় বরং একটি অভ্যুত্থানের উপর দাঁড়িয়ে, দেশের মানুষের অসংখ্য ত্যাগের উপর দাঁড়িয়ে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার কাছে দায়বদ্ধ একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জুলাই সনদের পূর্বে নির্বাচনের মাস আর তারিখ নিয়ে কথা বলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়বদ্ধতা ভুলে যাওয়ার নামান্তর।'

সুতরাং ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেটি আসলে মুদ্রার একপিঠ। অন্যপিঠ হচ্ছে, এটা শর্তসাপেক্ষ এবং এখানে অনেকগুলো 'যদি কিন্তু' রয়ে গেছে।

ভোট কি শুধু ক্ষমতার পালাবদল?

তবে এটা ঠিক যে, নির্বাচন যখনই হোক, সেটি যদি শুধুমাত্র একটি ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়; যদি অতীতের সরকারগুলোর মতো দেশে একদলীয় এবং পরিবারকেন্দ্রীক রাজনীতি ঘুরপাক খেতে থাকে; যদি উন্নয়নের নামে লুটপাটের মহোৎসব চলতে থাকে; যদি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতোই দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে; রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো যদি আগের মতোই বিরোধী মত দমনের হাতিয়ার হিসেবেই কাজ করতে থাকে—তাহলে প্রমাণ হবে যে, ওই নির্বাচন গণতান্ত্রিক উত্তরণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

এমতাবস্থায়, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে জুলাই সনদ তৈরি হওয়ার কথা, সেখানে নির্বাচনের পরে গঠিত সরকার কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, তার সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ও কর্মসূচি লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। সেখানে এমন একটি আইনি বাধ্যবাধকতা ও কমিটমেন্ট থাকতে হবে, যাতে বিজয়ী দল সরকার গঠন করেই ওই সনদ ছুঁড়ে ফেলতে না পারে।

সর্বোপরি, বিচার ও সংস্কারের দোহাই দিয়ে নির্বাচন যেমন দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখার সুযোগ নেই, তেমনি শুধুমাত্র একটি দলের পরে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় এনে পুরোনো পদ্ধতির চক্রে দেশকে ঠেলে দেওয়াটাও কোনো কাজের কথা নয়। বরং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে যৌক্তিক সময়ে মধ্যে নির্বাচন হতে হবে এটা যেমন ঠিক, তেমনি আগামী নির্বাচনের পরে যে সরকার গঠিত হবে, তাদেরকে পুরোনো ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে নতুন রাষ্ট্রচিন্তা ও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে পূর্বশর্ত সুশাসন—সেটি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। জুলাই সনদে তার অঙ্গীকার ও বাস্তবায়নের কর্মপদ্ধতি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। 


আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক

Comments