আমি কেন লিখি?

আমার কাছে লেখালেখি একরকম থেরাপির মতো। লেখি অনেকটা মনের শান্তির জন্য। মাথার ভেতর যা গুমোট হয়ে জমে থাকে, সেটা যদি কাগজে বের না করি, তাহলে সেটা ধীরে ধীরে বিষ হয়ে ওঠে।

চারপাশে এত অন্যায়, এত কষ্ট—সেগুলো শুধু চোখে দেখে চুপ করে থাকলে ভেতরটা কেমন জানি ভারী হয়ে যায়। কেউ একজন হয়তো বলবে, 'এই জিনিস নিয়ে আবার লেখার কী আছে?' কিন্তু আমি জানি, না লিখলে হাঁপ ধরে যাবে আমার ভেতরটায়।

লেখার ভেতরেই একটা মুক্তি আছে। এই যেমন, অনেকে চুপ করে কাঁদে, কেউ আবার ডায়েরিতে লিখে মন হালকা করে—ঠিক তেমনটাই।

অনেক দেশ ঘুরে আমার চোখে একটা জিনিস খুব স্পষ্ট হয়েছে—যে দেশগুলো উন্নত, তাদের মানুষজন চিন্তা করতে জানে। ওরা সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ আলাদা করতে পারে। কোনো অন্যায় দেখলে চুপ করে থাকে না।

আমরা ঠিক উল্টো। এত কিছু দেখি, শুনি, জানি—তবু মুখ খুলি না। মানিয়ে নেই। আর এই মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে একটা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি আছে। আমরা ধীরে ধীরে নিজেরাই ছোট হয়ে যাই মানসিকভাবে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় লেখা।

আমি লেখি, যেন মানুষ একটু হলেও সচেতন হয়, একটু হলেও থামে, ভাবে—'অন্যায় মানবো কেন?'

তবে শুধু আমি একা না, পৃথিবীর বহু মানুষ নানা কারণে লেখে। লেখার পিছনে অনেক রকমের কারণ থাকে। জর্জ অরওয়েল যেমন বলেছিলেন, তিনি চারটা কারণে লিখতেন—

  • আত্মমুগ্ধতা (Sheer egoism)
  • নান্দনিক আগ্রহ (Aesthetic enthusiasm)
  • ইতিহাসের টান (Historical impulse)
  • রাজনৈতিক উদ্দেশ্য (Political purpose)

তার এই কারণগুলোর মধ্যে চার নম্বরটাই আমাকে টানে বেশি ইদানিং।

অরওয়েল যে শুধু নিজের ইগোর জন্য লিখতেন, তা না। তিনি বিশ্বাস করতেন, কিছু মানুষ জন্ম থেকেই অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা চিন্তা করে, একটু বেশি স্বতন্ত্রভাবে জীবন কাটাতে চায়। এই মানুষগুলোই লেখে, কারণ তারা চুপ থাকতে পারে না। সে কারণে ওনার '১৯৮৪' একটা গ্রেটেস্ট পলিটিক্যাল স্যাটায়ার।

আরেকটা উদাহরণ দেই—মাইকেল ফিলিপস নামে একজন ব্লগার আছেন, তার জীবন একদম আলাদা। তিনি বলেন, 'আমি লেখার মধ্যে একটা এক্সাইটমেন্ট পাই। আমি অদ্ভুত কিছু সৃষ্টি করতে ভালোবাসি।' ভাবুন তো, কেউ যদি বলে, 'তোমার লেখা তো ছাপানোই যাবে না!'—তবু সে লিখে যায়। এই হচ্ছে সেই লোক। কেন? কারণ লেখার মধ্যেই তার বেঁচে থাকা।

আমার ৭০ শতাংশ লেখা আমি প্রিন্টে পাঠাই না, কারণ আমি লিখতে ভালবাসি। নিজের জন্য হলেও লিখতে চাই।

একজন ব্লগ পাঠক আমান লিখেছেন—লেখা তার কাছে থেরাপির মতো। অনেক সময় যখন কিছুই বুঝে ওঠা যায় না, তখনো সে লিখে যায়। কারণ কখনও কখনও বুঝতে পারি না, আসলে আমরা কী লিখছি। কিন্তু আমাদের ভেতরের কোনো না কোনো সুপ্ত কণ্ঠ তখন সত্যি কথা উগরে দিচ্ছে।

তাই বলি, লেখা মানে শুধু শব্দের খেলা না। এটা আত্মাকে পরিষ্কার রাখার একটা উপায়। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, 'তুমি কেন লেখো?'—আমি খুব সহজ করে বলি, 'কারণ আমি চুপ থাকতে পারি না। মনের শান্তির জন্য লিখি। আপনাদের জন্য লিখি।'


রকিবুল হাসান: টেলিকম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক লেখক এবং লিংক-থ্রি টেকনোলজিস লিমিটেডের চিফ টেকনোলজি অফিসার

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

7h ago