চাঁদাবাজি-দখলদারির হাল ও বিএনপির চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ একটা অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে আছে। এখানে রাজনীতিবিদরাই দেশটাকে অচল করেছেন। রাজনীতির বাইরের মানুষরা সেটা মেরামতের চেষ্টা করছেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরের বাংলাদেশ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও কিছুটা থিতু হয়েছে, সেই আবহে ঢাকা থেকে বেরুলাম। ফেসবুকের দুনিয়া ছেড়ে বাস্তবের দুনিয়ায় নেমেছি। যাবো ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ শহরের মাছকান্দা বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সড়কপথে ঢাকা-ময়মনসিংহ যাত্রার সবচাইতে প্রমিন্যান্ট পরিবহন হচ্ছে 'এনা পরিবহন'। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে তাদেরই একচ্ছত্র প্রভাব। তারাই এই রুটের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা।

১২০ কিলোমিটারের জন্য নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল সর্বশেষ ৩২০ টাকা। কখনো ৩১০ টাকা। এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ পরিবহন জগতের তারকা ব্যক্তি। তার উত্থানও বিস্ময়কর।  বিএনপির সময়ে তো বটেই, আওয়ামী লীগের পুরো শাসনকালে স্টার পরিবহন নেতা।

সুদর্শন খন্দকার এনায়েতুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছিলেন বটে, কিন্তু এমপি হতে পারেননি কখনো। শেখ হাসিনার পলায়নের পর খন্দকার এনায়েতুল্লাহ গা ঢাকা দিয়েছেন। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে দেখলাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের এনা পরিবহন আর নেই। গাড়িগুলোর রং বদল হয়েছেই কেবল নয়, নামও বদল হয়েছে। 'এনা পরিবহনে'র জায়গা নিয়েছে 'ইউনাইটেড পরিবহন'। ভাড়ার রেট সমান আছে।

গাড়িতে চড়ে বোঝা গেল, খন্দকার এনায়েতুল্লাহ সাহেবের সিস্টেমটা ঠিক থেকেছে, শুধু মালিকানা বদল হয়েছে। কারা এখনকার মালিক? শুনলাম নতুন পরিবহন নেতারা এই শূন্যস্থান পূর্ণ করেছেন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ও সহজেই অনুমেয়। যাত্রা শুরু হলে এক যাত্রীকে বারবার বলতে শুনলাম, আমরা কিন্তু এনা'র যাত্রী ছিলাম সবসময়, সার্ভিস যেন ঠিক সেরকম থাকে।

যারা এই পরিবহন পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন ড্রাইভার, সুপারভাইজার, কাউন্টার মাস্টার তাদেরও পরিবর্তন দেখলাম—সেখানেও নতুন একসেট মানুষ। গাড়ির ভেতরের অবয়ব দেখে মনে হলো, সেখানেও বদল ঘটে গেছে। কাজেই যাত্রীসেবায় বহু বছরের অভিজ্ঞ এনা পরিবহনের মতো সার্ভিস এই ইউনাইটেড পরিবহনের পরিচালকরা কত দিনে দিতে পারবেন, সেটা একটা চ্যালেঞ্জও বটে।

এই অভিজ্ঞতা এক বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করছিলাম। তিনি বললেন, দেখেছেন, বিএনপির পরিবহন নেতারা দখল নিতে সময় নিলো না। পরিবহণের নামও চেঞ্জ করে দিল। আমি তার কথার উত্তাপ ও উত্তেজনা থামলে বললাম, এখানে একটা কিন্তু আছে। সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থায় সরকারের কোনো স্টেক বা অংশ প্রায় নেইই—এক বিআরটিসির বাস ছাড়া। সেখানেও খুব কম জায়গাতে সরকার নিজে পরিচালনা করেন। অধিকাংশ বিআরটিসি বাস চলে কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে, প্রাইভেট ব্যবস্থায়। কাজেই আমাদের পুরো সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা চালায় প্রাইভেট মালিকরা। সেখানে এনার মালিক পালিয়ে গেলে সেই শূন্যস্থান পূরণ করবে কে? কাওকে না কাওকে তো হাল ধরতেই হবে। অথবা পুরো সার্ভিস বন্ধ করে রাখতে হবে।

এই সার্ভিস সচল রাখতে সরকারের কোনো সিস্টেম নেই। ফলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নিজস্ব লোক হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে ওঠা পরিবহণ মালিকের অনুপস্থিতিতে জনস্বার্থেই (!) বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত পরিবহন নেতারা হাজির হয়েছেন।

২.

আমাদের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় যেহেতু সরকারের কোনো স্টেক নেই, সরকার যেহেতু অংশীজন নয়, ফলে মানুষ নিজের প্রয়োজনে নিজের চেষ্টায়, নিজের উদ্যমে, নানাভাবে নিজেদের অর্থায়নে নানা রুটে নানারকম ব্যবস্থা তৈরি করে নিয়েছে। বিশেষত, ব্যাটারিচালিত যানবাহন নানাভাবে জায়গা নিয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে সিএনজিচালিত অটোরিকশারও বিপুল বিস্তার ঘটেছে। টেম্পু বা লেগুনাও নানাভাবে জনযোগাযোগের বড় মাধ্যম হয়ে গেছে।

এসব বিচিত্র যানবাহন পরিচালনার জন্য রুট ব্যবস্থাপনায় একশ্রেণীর মধ্যস্বত্ত্বীয় ব্যাপার গড়ে উঠেছে। থানা-পুলিশ-স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ চাঁদার একটা বড় জায়গা এসব। সারা দেশেই এই মধ্যস্বত্ত্বীয় চাঁদার ভাগ-বণ্টন ব্যবস্থাপনা বছরের পর বছর সক্রিয় রয়েছে।

আমি মাঝে মাঝে ঢাকার সন্নিকটে আশুলিয়ায় অবস্থিত ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে যাই। মিরপুর-১ থেকে লেগুনায় দিয়াবাড়ি হয়ে বিরুলিয়া ব্রিজ পেরিয়ে সরাসরি খাগান বাজার পর্যন্ত যাওয়া যায়। কিছুটা বেপরোয়া চালালেও এই রুটে এটাই সাধারণের চলাচলের সরাসরি বাহন। আগস্টের শেষের দিকে লেগুনায় চড়ে মিরপুর-১ থেকে খাগানে নামলাম। যথারীতি ৫০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিতেই লেগুনার ড্রাইভার ১০ টাকা ফেরত দিলেন। ভাবলাম ভাড়া কম নিচ্ছে কেন?

বললাম, ভাড়া পাঁচ টাকা কম রাখছেন কেন? বললেন, খুচরা পাঁচ টাকা নেই তো! বাড়তি একটা পাঁচ টাকার কয়েন দিয়ে বললাম, আরে ভাড়া কম নেবেন কেন? একটু অবাকই হলাম। লেগুনা চালকরা কখনো এইরকমভাবে পাঁচ টাকা তো ছাড় দেননি। ফেরার সময় নেমে ভাড়া কত জিজ্ঞেস করতেই লেগুনা চালক ৪০ টাকাই নিলেন। সহযাত্রীদের সবাইকেই এই ভাড়াই দিতে দেখলাম। এরপর যতবার গিয়েছি ভাড়া ৪০ টাকাই দিয়েছি।

বুঝলাম, আসলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে এই রুটে চাঁদাবাজদের অনুপস্থিতিতে যাত্রীপ্রতি ভাড়া পাঁচ টাকা কমেছে। এখনো এই স্থানীয় রুটে পালিয়ে যাওয়া চাঁদাবাজদের জায়গায় নতুন চাঁদাবাজরা জায়গা নেননি। আশা করছি অচিরেই সেটা ঘটে যাবে!

৩.

এই যে চাঁদাবাজরা পালিয়ে গেলেন বাজার-ঘাট-সড়ক-জলমহাল সব জায়গা থেকে, সেটার তো একটা রিপ্লেসমেন্ট হচ্ছে। সব জায়গাতেই। আমাদের রাজনৈতিক অর্থনীতির বড় ক্ষেত্র হচ্ছে চাঁদাবাজি। কাজেই মুফতে আয়ের এই জায়গা ফাঁকা থাকবে না। আওয়ামী লীগের বদলে জায়গা নেবে বিএনপিই। কোথাও কোথাও হয়তো জামায়াত।

সম্প্রতি ফেসবুকে এক যুবদল নেতার একটা ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে তিনি বলছেন, আওয়ামী চাঁদাবাজরা পালিয়ে যাওয়ার পর বাজার কমিটির নেতা হিসেবে সেই জায়গায় তিনি বসেছেন, সিস্টেম সচল রাখতে। যদিও তিনি যুবদল করেন, তবুও তিনি তো বাজার কমিটির নেতা।

বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা প্রায় ১৭ বছর ঘরছাড়া। রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী নির্যাতনের শিকার হয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। বহু বছর আয়-ইনকামের বাইরে থেকেছেন। তাদের অনেকেরই ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে নেমে এসেছে ভয়ংকর বিপর্যয়। একটা ট্রমার ভেতর থেকে হঠাৎ করে আলোর ঝলকানির মতো অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের সামনে এই সুযোগ হাজির।

এখন কি তারা নির্মোহ ঋষির ভূমিকা পালন করবেন? দেশে যখন বেসামরিক প্রশাসন কিছুটা অপ্রস্তুত, পুলিশ প্রশাসন একেবারেই মনোবলহীন—সেই ফাঁকা মাঠে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া চাঁদাবাজি বা উপরি আয়ের অবারিত-রেডিমেড সুযোগ না নিয়েই বা তারা থাকবেন কি করে?

এটাই এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তৃণমূল অবধি তার সাংগঠনিক বিস্তৃতি আছে। এই বড় সংগঠনের এতো মানুষের চাহিদাকে সামাল দেবেন কি করে বিএনপি নেতারা? ইতোমধ্যে বিএনপির মাঠ পর্যায়ে বহু জায়গার বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদল নেতাদের দখলদারিত্ব, কথাবার্তা, বেয়ারা আচরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাউর হয়েছে। সেসব বড় সমালোচনা তৈরি করছে।

বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারাও নানাভাবে সেসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বহিষ্কার, সদস্যপদ স্থগিত ইত্যাদি করছেন। বিএনপির নেতা তারেক রহমান বারংবার কর্মীদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্কও করছেন। কিন্তু বিএনপির মাঠ পর্যায়ে নেতাদের থামানো যাচ্ছে না। এসব কর্মকাণ্ড বিএনপিকে বিব্রত করছে, দলের হাইকমান্ডের নেতারা অস্বস্তিতে পড়ছেন বটে, কিন্তু তা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

৪.

এখন দেখা যাক এগুলো সামনে কেন বিএনপির রাজনীতিকে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলতে পারে। বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পথকে বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে।

ক. তত্ত্বাবধায়ক সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে, সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ যদি বিলম্বিত হয়, তাহলে নির্বাচন সহসাই হবে সেটা আশা করা দুরূহ। আবার দেশের অর্থনীতির যে বেহাল দশা, সেটাও স্বাভাবিক অবস্থায় না এলে নির্বাচনের ধকল দেশ সইতে পারবে না। ফলে, নির্বাচন বিলম্বিত হবে। সেটা বিএনপিকে ক্রমাগত চাপে ফেলবে।

খ. নির্বাচনের সময় সম্পর্কে দিনক্ষণ ঘোষিত না হলে বিএনপিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচনের দাবিতে চাপে ফেলতে চাইবে। সেটা দেশের মানুষ কতটা সাদরে নেবে—বলা কঠিন। তাই নির্বাচন যত দূরে সরবে, বিএনপির জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ ততই কঠিন হয়ে উঠবে।

গ. ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আর আত্মাহুতি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, তাকে বাদ দিয়ে এগুনো এখন সহজ হবে না। পুরনো দিনের দখলদারি, চাঁদাবাজির রাজনৈতিক অর্থনীতি সচল রাখার দর্শন বদলে ফেলতে না পারলে সেটা বিএনপির রাজনীতিকে কতটা জনবান্ধব রাখবে, সেটাও একটা জটিল বিষয়। গোটা দেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চাঁদাবাজির জায়গাগুলো মুফতে বিএনপি দ্বারা রিপ্লেস হলে, মানুষ সেটাকে কীভাবে দেখবে—বলা মুশকিল।

ঘ. বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী যারা বছরের পর বছর ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং আর্থিকভাবে পর্যুদস্ত, তাদের নতুন আয়ের বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে? কীভাবে তাদের জীবিকা চলবে? ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি, দখলের বাজার হাতে না রাখলে তাদের আয়ের ব্যবস্থা কী হবে? বিকল্প না দিয়ে শুধু নেতাদের মুখের নীতিকথা দিয়ে কি নেতাকর্মীদের সুপথে রাখতে পারবে বিএনপি? সেটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

ঙ. জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির মাঠের এই সুযোগটা নিতে চাইবে। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রে তারা ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে। তাদের রাজনৈতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রটাও পুষ্ট। তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তাদের নেতাকর্মীরা জীবিকার সন্ধান পাবে। রাজনৈতিকভাবে নেতাকর্মীদের তারা বিএনপির চেয়ে অধিকতর চেইন অব কমান্ড ফলো করে নিয়ন্ত্রণ করতেও পারবেন। সেক্ষেত্রে জনমানুষের কাজে নিজেদের ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপির জন্য তারা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে।

চ. বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ আপাতত লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও অচিরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে পড়বে। বিএনপির যেকোনো রকমের নৈতিক চ্যুতিকে তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে শোরগোল ফেলে দিতে পারে। সেটাও বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ছ. ফ্যাসিবাদের বিচার, গুমের বিচার, বিডিআর বিদ্রোহের বিচার, ছাত্র-জনতাকে গণহত্যার বিচার, দুর্নীতির বিচার মানুষ চায়। সেটা যে রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারই সেটা করতে পারবে, সেই বিশ্বাস মানুষের আছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভালোভাবে ফাংশন করুক, সেটা দেশের জনগণ প্রাণপণে চাইবে। সে কারণেই চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুশাসনের অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়, সেটাও মানুষ চাইবে। ফলে, এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে তার নেতাকর্মীদের সুরাজনীতির পথে রাখতেই হবে। সেটা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ একটা অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে আছে। এখানে রাজনীতিবিদরাই দেশটাকে অচল করেছেন। রাজনীতির বাইরের মানুষরা সেটা মেরামতের চেষ্টা করছেন। মূলধারার রাজনীতির বাইরের একদল ছাত্র-জনতা সামনে থেকে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই অভ্যুত্থান রাষ্ট্র সংস্কার বা রাষ্ট্র মেরামতের এক অনির্বচনীয় আকাঙ্ক্ষা সামনে এনেছে। একটা তরুণ জনগোষ্ঠী যারা—মোট ভোটারের বড় অংশ—তারা রাজনীতির লেবাস ছাড়া মাঠে নেমে এই পরিবর্তনকে সম্ভব বলে আশা জাগিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সম্ভাবনা নিয়ে মাঠে হাজির থাকলেও অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বহুবিধ চ্যালেঞ্জ তার সামনে।

দেশজুড়ে চাঁদাবাজি-দখলদারির অবারিত ফাঁকা মাঠের রাজনৈতিক অর্থনীতি জনস্বার্থে না ব্যক্তি-দল-গোষ্ঠিস্বার্থে ব্যবহৃত হয়, এই কঠিন চ্যালেঞ্জকে ১৭ বছরের আন্দোলনের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ নতুন বিএনপি কীভাবে মোকাবিলা করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

শুভ কিবরিয়া: সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

১০ আগস্ট ২০২৪

Comments