ফারদিনের ‘আত্মহত্যার’ যে কারণ জানাল ডিবি

বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনাকে 'আত্মহত্যা' বলে উল্লেখ করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
ফারদিন নূর পরশ। ছবি: সংগৃহীত

বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনাকে 'আত্মহত্যা' বলে উল্লেখ করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিবি কার্যালয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ফারদিনের 'আত্মহত্যার' পেছনের কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, 'অনেক দিন ধরে আমরা এর তদন্ত করছি। ঘটনার দিন তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেছেন। তিনি ওই রাতে এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার মানসিক সমস্যা ছিল বলেই তিনি এরকম এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন।'

ফারদিনের মানসিক অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মুখী ছিলেন। তিনি সবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে পারতেন না। তার রেজাল্ট ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে ৩ দশমিক ১৫। তারপর কমতে কমতে ২ দশমিক ৬৭। বিষয়টি তার বাসার লোকজন বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানতেন না।'

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিবি কার্যালয়ে ব্রিফিং করছেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ছবি: মুনতাকিম সাদ/স্টার

তিনি আরও জানান, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশে স্পেন যেতে ফারদিনের ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। এই টাকা জোগাড় করতে তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। বন্ধুদের কাছ থেকে তিনি ৪০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন।'

'ফারদিন ৪টা টিউশন করাতেন' উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'এই টাকা দিয়ে তিনি নিজের ও ছোট ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। তারপরও তার বাড়িতে শাসন ছিল, তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার নির্দেশ ছিল। হলে থাকা যাবে না। তিনি এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিলেন, যেটা তিনি মানতে পারেননি।'

'ঘটনার রাতে ফারদিন উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, 'এতে প্রতীয়মান হয় যে তিনি মানসিকভাবে ডিস্টার্বড ছিলেন। কারও সঙ্গে ওই রাতে দেখা করেননি।'

'তিনি আত্মহত্যার জন্য বাবুবাজার ব্রিজ যান। রাত ১০টা ৫৩ মিনিট, ১১টা ৯ মিনিটের দিকে বাবুবাজার ব্রিজ ব্যস্ত থাকায় সম্ভবত সেখান থেকে তিনি চলে যান। তারপর আবার নিজের বাসা অতিক্রম করে ডেমরা সেতুতে যান,' বলেন তিনি।

ফারদিনের গ্রামীণফোনের নম্বর ট্র্যাক করে তার অবস্থান ডেমরা সেতুর উপর অনুমান করা হয়েছে এবং এই লোকেশনটিতে তিনি লেগুনা থেকে নেমেছিলেন বলে লেগুনা চালক জানিয়েছিলেন। এই দুই লোকেশনের মধ্যে মিল পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন ডিবি প্রধান।

তিনি বলেন, 'এতে প্রতীয়মান হয় যে ফারদিন সর্বশেষ ওই সেতুর ঠিক মাঝখানে অবস্থান করছিলেন।'

ফারদিন সাঁতার জানতেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়া ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর সঙ্গে মেসেঞ্জার ও টেলিগ্রামে কথোপকথন পুলিশের হাতে আছে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান জানান, 'সেসব কথোপকথনে ফারদিন তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছেন অনেকবার। মুমুর ভাষ্যমতে ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারেন বলে মুমু মনে করেছিলেন।'

ফারদিনের সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যে ডাক্তার ময়নাতদন্ত করেছেন, তাদের সঙ্গে আমরা অনেকবার যোগাযোগ করি। ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আসেনি। পূর্ণাঙ্গ মতামত তারা দেবেন। প্রাথমিকভাবে যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে মাথায় আঘাতের কথা বলা আছে। কিন্তু খুবই সামান্য আঘাত, যে আঘাতে সর্বোচ্চ অজ্ঞান হতে পারে বলে ডাক্তার জানান। যদিও মিডিয়ার সামনে বলে ফেলেছেন মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকলে পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উঠে আসতো।'

এরকম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরির পর আত্মহত্যা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ফারদিনও এরকম একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন উদ্দেশ্যহীনভাবে। বুশরাকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে নামানোর পর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং কারও সঙ্গে দেখা করেননি। ফারদিনের গত ১ বছরের ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড বা সিডিআর পর্যালোচনা করে আগে কখনো এমন দেখা যায়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

9 die of dengue

Highest single-day deaths this year

2h ago