প্রশাসনের ‘ক্ষমতা’ ও নির্বাচন কমিশনের ‘অসহায়ত্ব’

গত শনিবার দেশের সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভা হয়। সভায় একজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য চলাকালীন হইচই শুরু করেন ডিসি-এসপিরা। পরে ডিসি-এসপিদের 'ইচ্ছায়' বক্তব্য শেষ না করেই বসে পড়েন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যাদের কাজ করার কথা, তারা নির্দেশনা শুনে হইচই করছেন। নির্বাচন কমিশন অসহায়ভাবে বলছে, তা মেনে নিচ্ছে। এই যদি নির্বাচন কমিশনের অবস্থা হয়, তবে নির্বাচনের সময়ে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? এখনই নির্বাচন কমিশন যাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বা করছে না, নির্বাচনের সময় কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে।

প্রশাসন যে কতটা ক্ষমতাশালী, ডিসি-এসপিদের এ ধরনের আচরণের মাধ্যমেই তা বোঝা যায় বলে মন্তব্য করেন ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, 'সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালে ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনের আদেশ মানবেন। এখন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তারা হইচই করলেন। এর মানে তারা নির্বাচন কমিশনকে পাত্তা দিচ্ছেন না। এ থেকেই বোঝা যায় যে প্রশাসন কতটা ক্ষমতাশালী।'

নির্বাচনকালীন মাঠপর্যায়ে কাজ করার সময় ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখানে ২টি বিষয়। একটা হলো সংবিধান ও আইন। দ্বিতীয়ত, আমি মানব না, আপনি কী করতে পারবেন! এখন যদি ডিসি-এসপিরা সংবিধান ও আইন মানেন, তাহলে তাদের নির্বাচন কমিশনকে মানতে হবে। তবে, যদি তাদের ইচ্ছা না থাকে, যেকোনোভাবে তারা অমান্য করতে পারেন। সেটা সম্ভব। যদি সরকার এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তো নির্বাচন শেষ হলে কমিশনের কর্তৃত্বও শেষ হয়ে যাবে। কমিশন কিছু কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিখবে। এখন প্রশাসন যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের পুরস্কৃত করে, তাহলে কী করার আছে? কিছু করার নেই।'

এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, 'নির্বাচন কমিশনে ঘটা ঘটনা একটাই বার্তা দেয় যে, প্রশাসনই সর্বেসর্বা। নির্বাচন কমিশন বা অন্যান্য যারা আছে, তাদেরকে উপেক্ষা করলেও প্রশাসনকে কিছু করা যাবে না। তারা নিজেদেরকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভাবছেন এবং আসলেও তারা তাই।'

আইনগত বিষয়ে তিনি বলেন, 'এখন দেশে কোনো নির্বাচন কমিশন আইন নেই। আছে বাছাই কমিটি আইন। কিন্তু, পূর্ণাঙ্গ আইন আমাদের দরকার। আমরা একটা সম্পূর্ণ আইন করতে বলেছিলাম। সেই আইনে থাকবে নির্বাচন কমিশন বাছাই প্রক্রিয়া কী হবে, নির্বাচন কমিশনে যোগ্যতা কী হবে এবং নির্বাচন কমিশন কীভাবে কাজ করবে। সংবিধান বলেছে যে, ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। কিন্তু, না করলে কী হবে, সেটা তো সংবিধান বলবে না। সেজন্যই আইন দরকার।'

'ডিসি-এসপিরা তো সরকারের কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার। নির্বাচন কমিশন যদি অভিযোগ করে এবং এরপর সরকার যদি চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। অন্যথায় কিছুই হবে না', যোগ করেন ড. তোফায়েল আহমেদ।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'অতীতে আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের মধ্যে এক ধরনের আঁতাত ছিল। এখন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও বিরাট প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচন আমাদের কমিশনের ট্র্যাক রেকর্ড হলো তারা পক্ষপাতদুষ্ট। এখন নির্বাচনকালে তারা ডিসি-এসপিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি না, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো তারা সেটা করবে কি না।'

সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, 'কেউ চট্টগ্রামের দিকে রওনা দিয়ে তো রংপুর যেতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে?'

'গত নির্বাচনে যা হলো, সবাই নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করেছেন। তখন কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এখন সভায় ডিসি-এসপিরা যা করল, নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে এবং সরকার ইচ্ছা করলে ব্যবস্থা নিতে পারবে', বলেন তিনি।

ডিসি-এসপিদের এ ঘটনার পর একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এটা কোনো ব্যাপার না। আসলেই কি এটা কোনো ব্যাপার না? জানতে চাইলে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'এ নির্বাচন কমিশনের প্রতি কারোই আস্থা নেই। ডিসি, এসপি ও নির্বাচন কমিশন সবাই এক পক্ষের লোক।'

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

5h ago