লন্ডনে ফিলিস্তিনের পক্ষে ৩ লাখ মানুষের বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ১২০

লন্ডনে ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নেন তিন লাখেরও বেশি মানুষ। ছবি: রয়টার্স
লন্ডনে ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নেন তিন লাখেরও বেশি মানুষ। ছবি: রয়টার্স

তিন লাখেরও বেশি মানুষ যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে আয়োজিত এক বিক্ষোভে অংশ নেন। গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এই বিক্ষোভ ও পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এই বিক্ষোভ পণ্ড করার চেষ্টা চালালে পুলিশ ১২০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

আজ রোববার বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানায়।

এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাজ্যের কট্টর ডানপন্থী দলের সদস্যরা সমাবেশস্থলে জমায়েত হয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। 

পুলিশ জানায়, লন্ডনের বিক্ষোভে ৩ লাখ মানুষ যোগ দেন। আয়োজকদের দাবি, এতে ৮ লাখ মানুষ যোগ দেন। ছবি: রয়টার্স
পুলিশ জানায়, লন্ডনের বিক্ষোভে ৩ লাখ মানুষ যোগ দেন। আয়োজকদের দাবি, এতে ৮ লাখ মানুষ যোগ দেন। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাক এই সহিংসতার প্রতি নিন্দা জানান। তিনি একইসঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া 'হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল' মানুষেরও সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, কিছু মানুষ 'ইহুদী বিদ্বেষী শ্লোগান দেয় এবং হামাসের চিহ্ন সম্বলিত ব্যানার ও পোশাক পড়ে বিক্ষোভে যোগ দেয়'।

শনিবারের এই বিক্ষোভ সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই একে ঘিরে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এবং গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতিতে আয়োজিত এই বিক্ষোভ ছিল সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় আয়োজন। এর আগে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলকে নিয়ে কটূক্তি করেন। তিনি দাবি করেন, ইসরায়েলিদের ঘৃণা করেন এমন কিছু দুষ্কৃতিকারী এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

মন্ত্রণালয় থেকে এই বিক্ষোভ বন্ধের অনুরোধ জানানো হলেও লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা জানায়, এই বিক্ষোভ থেকে গুরুতর পর্যায়ের সহিংসতা ছড়ানোর কোনো লক্ষণ তারা দেখছেন না। যার ফলে, সরকারের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

পুলিশ শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, বিক্ষোভ থেকে ১২৬ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই কট্টর ডানপন্থী দলের সদস্য।

বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসে সহিংসতার দায়ে কট্টর ডানপন্থী দলের কর্মীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসে সহিংসতার দায়ে কট্টর ডানপন্থী দলের কর্মীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

লন্ডন পুলিশের সহকারী কমিশনার ম্যাট টুইস্ট বলেন, 'কট্টর ডানপন্থী দলের প্রতিবাদকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন পর্যায়ের সহিংসতা দেখিয়েছেন, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।'

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছে ছুরি ও পিতলের গ্লাভসের (ব্রাস নাকলস) মতো অস্ত্র পাওয়া গেছে।'

মূল বিক্ষোভে কোনো সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে জানা না গেলেও, এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি ছোট ছোট দল মূল পদযাত্রা থেকে বের হয়ে এসে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্ম দেয়।

১৫০ জনের একটি দল মুখে মুখোশ পড়ে আতসবাজি ফুটিয়েছেন, যার কয়েকটি পুলিশ কর্মকর্তাদের আঘাত করে। সেখান থেকে কিছু মানুষ গ্রেপ্তার হন। 

রিশি সুনাক পুলিশকে দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

শনিবার রাতে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'সব ধরনের অপরাধকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমি এ কথাটি বুধবার লন্ডনের পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছে। এটা তাদের দায়িত্ব এবং আমার প্রত্যাশা তারা তা পালন করবে।'

পুলিশ জানায়, লন্ডনের বিক্ষোভে ৩ লাখ মানুষ যোগ দেন। আয়োজকদের দাবি, এতে ৮ লাখ মানুষ যোগ দেন। ছবি: রয়টার্স
পুলিশ জানায়, লন্ডনের বিক্ষোভে ৩ লাখ মানুষ যোগ দেন। আয়োজকদের দাবি, এতে ৮ লাখ মানুষ যোগ দেন। ছবি: রয়টার্স

দিনভর ডানপন্থী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত অব্যাহত থাকে। রায়ট পুলিশ ব্যাটন ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালালে বিক্ষোভকারীরা তাদের দিকে খালি বোতল ছুঁড়ে মারেন।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ও স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসুফ জানান, সুয়েলা ব্রেভারম্যান তার উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন।

তারা দাবি করেন, ব্রেভারম্যান বিক্ষোভের আগে পুলিশের বিরুদ্ধে 'ফিলিস্তিনপন্থী দুষ্কৃতিকারীদের' প্রতি পক্ষপাত দেখানোর অভিযোগ এনেছেন।  

পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভ মিছিলে তিন লাখ মানুষ যোগ দেন। তবে আয়োজকরা বলেন, আট লাখেরও বেশি মানুষ এতে যোগ দেয়।

বিক্ষোভকারীরা 'ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি' সুরে গাজার বাসিন্দাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

অনেক ইহুদী এই শ্লোগানকে ইহুদী বিদ্বেষ ছড়ানো ও ইসরায়েল নির্মূলের আহ্বান হিসেবে বিবেচনা করেন। 

অন্যান্যরা 'ফিলিস্তিন মুক্ত কর', 'গণহত্যা বন্ধ কর' ও 'গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ কর' লেখা ব্যানার নিয়ে মিছিলে অংশ নেন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাস হামলা চালালে ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। আরও ২০০ জনের মতো ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে হামাস। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় প্রতিশোধমূলক নির্বিচার হামলা শুরু করে, যা প্রায় ৩৫ দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিমানবাহিনীর সঙ্গে এ হামলায় যোগ দিয়েছে ইসরায়েলের স্থল বাহিনী।

যুদ্ধের শুরুতে নিহত ও জিম্মির সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ৪০০ ও ২৪০ বলে জানানো হলেও সর্বশেষ তথ্যে এই সংখ্যাটি সংশোধন করে কমিয়ে এনেছে ইসরায়েল।

শুক্রবার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, বিমান ও কামান হামলায় সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের ৪০ শতাংশই শিশু।

ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান আসলেও এতে কান দিচ্ছেন না দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 

গত শুক্রবার ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু জানান, যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। 

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

4h ago