ধোলাইখালে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, যা ঘটল সাড়ে ৩ ঘণ্টায়

পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে সকাল প্রায় ১১টা থেকে ধোলাইখালে সড়কের একপাশে জড়ো হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগকে সেখানে মিছিল করতে দেখা যায়।
ধোলাইখাল এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ। ছবি: সংগৃহীত

সকাল তখন প্রায় ১১টা। রাজধানীর পুরান ঢাকার ধোলাইখালে সড়কের একপাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির শত শত নেতাকর্মী। 

অনেকের হাতে ছিল লাঠি, কেউ কেউ দিচ্ছিলেন সরকার বিরোধী স্লোগান।

বিএনপির এ কর্মসূচি ছিল নয়াবাজারে। তবে সকাল থেকেই সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। বিপুল সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন করা হয় নয়াবাজারে।

সাড়ে ১১টার দিকে ধোলাইখাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। পুলিশের ধাওয়ায় প্রথমে বিএনপি সমর্থকরা পিছু হটলেও, পরে আবারও সংগঠিত হয়। 

গয়েশ্বর
ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত গয়েশ্বর চন্দ্রকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

নেতাকর্মীদের একটি অংশ পুলিশকে ধাওয়াও দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে এ সংঘর্ষ চলে। এতে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা আহত হন।

সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিভাগীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালামসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

তারা দলের কর্মীদের থামানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি।

সংঘর্ষে হঠাৎ ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন গয়েশ্বর চন্দ্র। তাকে সেখান থেকে একটি দোকানের ভেতরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাকে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনাস্থল থেকে আবদুস সালামকেও আটক করে পুলিশ।

গয়েশ্বরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ লাঠি দিয়ে গয়েশ্বরকে মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধোলাইখাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।

সংঘর্ষের সময় এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় ইটপাটকেল পড়েছিল। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে।

এদিকে প্রায় ১ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

দুপুর সোয়া ১টার দিকে ধোলাইখাল মোড়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল বের করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী।

সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং পরে সেখান থেকে চলে যান।

দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ধোলাইখাল মোড় ও এর সংলগ্ন রায়সাহেব বাজার মোড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দেখা যায়। ওই এলাকায় সে সময় পুলিশের সাঁজোয়া যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

ডিএমপির লালবাগ জোনের উপকমিশনার জাফর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকাল থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন তৈরির সময় ধোলাইখাল এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে আজ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা ছিল বিএনপির।

দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির উত্তরা বিএনএস কেন্দ্র ও গাবতলীতে এবং ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির নয়াবাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল।

পরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, গাবতলী, আমিনবাজার, বাবুবাজার, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ীসহ শহরের কয়েকটি প্রবেশপথে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত 'শান্তি সমাবেশের' ঘোষণা দেয়। 

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ উভয় পক্ষকেই 'অনুমতি না নেওয়ায়' কর্মসূচি পালন না করার কথা বলেছিল।

 

Comments