ভুট্টা খেলে পাবেন এই উপকারগুলো

ভুট্টার
ছবি: সংগৃহীত

ভুট্টা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্যশস্য এবং বহু দেশের মানুষ এটি প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। আমাদের দেশেও ভুট্টা উৎপাদন হয় এবং অনেকেই ভুট্টা খেতে পছন্দ করেন। এছাড়া যারা ওজন কমাতে চান তাদের কাছে ভুট্টা জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

চলুন জেনে নেই ভুট্টার স্বাস্থ্য উপকারিতা। জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

ভুট্টা একটি পুষ্টিকর খাদ্যশস্য যা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভুট্টা বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান, ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনে সমৃদ্ধ, যা শরীরের বিভিন্ন অংশের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়তা করে।

ভুট্টার পুষ্টিগুণ

ভুট্টায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এ, বি এবং ই। এছাড়া এটি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজে ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস৷

১০০ গ্রাম কাঁচা ভুট্টাতে রয়েছে-

ক্যালরি: ৮৬ কিলোক্যালরি

পানি: ৭৬%

কার্বোহাইড্রেট: ১৯ গ্রাম

চিনি: ৬.২৬ গ্রাম

ফাইবার: ২.৭ গ্রাম

প্রোটিন: ৩.২৭ গ্রাম

চর্বি: ১.১৮ গ্রাম

স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.১৮ গ্রাম

মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.৩৬ গ্রাম

পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.৫৩ গ্রাম

ভিটামিন এ: ১০ মাইক্রোগ্রাম

ভিটামিন সি: ৬.৮ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন): ০.১৫৫ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন): ০.০৫৫ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন): ১.৭৭ মিলিগ্রাম

ফোলেট (ভিটামিন বি৯): ৪২ মাইক্রোগ্রাম

ক্যালসিয়াম: ২ মিলিগ্রাম

আয়রন: ০.৫২ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম: ৩৭ মিলিগ্রাম

ফসফরাস: ৮৯ মিলিগ্রাম

পটাসিয়াম: ২৭০ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম: ১৫ মিলিগ্রাম

জিঙ্ক: ০.৪৬ মিলিগ্রাম

ভুট্টার উপকারিতা

পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী

ভুট্টা ফাইবার সমৃদ্ধ, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। ফাইবার অন্ত্রের চলাচল সহজ করে এবং পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

ভুট্টার মধ্যে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়াতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

ভুট্টায় উপস্থিত ভিটামিন এ, বিটা-ক্যারোটিন এবং লুটিন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ত্বক ও চুলের জন্য ভালো

ভুট্টার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই ত্বককে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যবান রাখে। এটি ত্বকের কোষগুলোর পুনর্গঠনে সহায়তা করে এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করে। ভুট্টার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং খুশকি প্রতিরোধে কার্যকর।

শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে

ভুট্টার উচ্চ কার্বোহাইড্রেট উপাদান শরীরকে পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে। এটি দ্রুত শক্তি প্রয়োজন এমন কাজ যেমন শারীরিক পরিশ্রম বা খেলাধুলার জন্য আদর্শ খাদ্য।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ভুট্টায় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফাইবার রক্তে শর্করার শোষণ ধীর করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

ভুট্টার ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা দূর করতে সাহায্য করে। এটি কম ক্যালরিযুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে কার্যকর। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলে খাদ্যতালিকায় ভুট্টা রাখলে এটি ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ

ভুট্টার মধ্যে থাকা ফেনলিক যৌগ, ক্যারোটেনয়েড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালের প্রভাব কমায়। এটি ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ ধীর করে।

ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে

ভুট্টার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি সর্দি-কাশি এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক।

হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে

ভুট্টায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান রয়েছে, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হাড়কে শক্তিশালী করে। এটি অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

প্রসবকালীন স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক

ভুট্টার মধ্যে উপস্থিত ফলেট অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভ্রূণের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করে এবং জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি হ্রাস করে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে

ভুট্টায় থাকা ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখে।

ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক

ভুট্টার মধ্যে থাকা ফাইটো-কেমিক্যাল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। বিশেষত ভুট্টার ফাইবার কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

পোস্ট-ওয়ার্কআউট রিকভারি

ভুট্টার কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন শরীরকে দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। এটি ক্লান্তি  করে এবং পেশি পুনর্গঠনে সহায়ক।

চর্মরোগ প্রতিরোধে সহায়ক

ভুট্টার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের প্রদাহ এবং চর্মরোগ প্রতিরোধে কার্যকর। এটি ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখে।

অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে

ভুট্টার মধ্যে আয়রন এবং ফলেট উপস্থিত, যা লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনে সহায়তা করে। এটি রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ভুট্টা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। যেমন ভুট্টার রুটি, ভাজা ভুট্টা, সুপ, সালাদ বা ভুট্টার দানা সেদ্ধ করে। তবে ভুট্টা রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। প্রক্রিয়াজাত ভুট্টার খাবার (যেমন কর্ন সিরাপ বা ভুট্টার চিপস) এড়িয়ে চলা ভালো।

সতর্কতা

ভুট্টা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে খাদ্যতালিকায় শুধু ভুট্টা রাখলেই হবে না, সুষম খাদ্যতালিকায় অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ভুট্টা খেলে কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে।

পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা

ভুট্টা ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা হজমে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত ভুট্টা খেলে ফাইবারের আধিক্যের কারণে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি

যদিও ভুট্টা কম ক্যালরিযুক্ত, তবে এর উচ্চ কার্বোহাইড্রেটের কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ক্যালরি সঞ্চিত হয়, যা ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে পারে। বিশেষত যদি ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন পপকর্ন বা কর্ন সিরাপ) হিসেবে খাওয়া হয়।

রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভুট্টা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত ভুট্টা খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষত মিষ্টি ভুট্টা বা প্রক্রিয়াজাত ভুট্টার ক্ষেত্রে।

অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা

কিছু মানুষের ভুট্টার প্রতি সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি থাকতে পারে। অতিরিক্ত ভুট্টা খেলে ত্বকে র‌্যাশ, চুলকানি, পেট ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লেপটোস্পাইরোসিস সংক্রমণের ঝুঁকি

খাবার সংরক্ষণ বা রান্নার সময় ভুট্টা সঠিকভাবে না প্রক্রিয়াজাত করলে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত ভুট্টা খাওয়া এই ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে।

সুতরাং ভুট্টা খাওয়া উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এটি সুষম খাদ্যাভাসের অংশ হিসেবে উপভোগ করলে স্বাস্থ্যকর উপকারিতা পাওয়া যাবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago