বিভ্রান্তিকর কথা বলে কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে: মির্জা আব্বাস

নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ছবি: সংগৃহীত

বিভ্রান্তিকর কথা বলে কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

আজ শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন… কখনো বলেন যাবেন না, কখনো বলেন যাবেন…কখনো বলেন এটা হলে যাব, কখনো বলেন ওটা হলে যাব।'

'আপনাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ২০০৮ সালে বিএনপি ও আমাদের জোট নির্বাচনে গিয়েছিল। তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অনেক নামী-দামী, অনেক বিখ্যাত-প্রখ্যাত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে ফাঁসির কাষ্ঠে। ওই রকম ভুল আর করবেন না দয়া করে। একটি ভুল লাখো মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে,' বলেন তিনি।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে কোনো টানবাহানা করবেন না। এটা আমি সরকারকে বলছি না, আমি বলছি এই সরকারকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। এই সরকারকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছেন।'

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, 'আমরা এই সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ডিসেম্বরের ঘোষণা দিয়েছেন…ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিন। আমরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।'

তিনি বলেন, 'যারা নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। পক্ষান্তরে তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা করছে, এ দেশের মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছেন, এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য চেষ্টা করছেন। দয়া করে আপনাদের বলব, এসব কাজ থেকে বিরত থাকুন।'

গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, 'অনেকে বলেন, নির্বাচনের আগে বিচার শেষ করতে হবে। ভাই বিচার শেষ করে নির্বাচন করবেন, এটা কি সম্ভব? তিন মাসের মধ্যে তড়িঘড়ি করে আপনারা বিচার করবেন…পারলে করেন, কোনো অসুবিধা নেই…তিন মাসের মধ্যে বিচার করেন অবিচার নয়…বিচার করতে হবে।'

দলের সদস্য নবায়ন কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দলের সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহে আমাদের খু্বই সাবধান হতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। যদি নবায়নের সময়ে দেখা যায় ওই ব্যক্তি সস্পর্কে সংগঠনবিরোধী কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছে, তার সদস্য পদ নবায়ন করা যাবে না। দলের দুর্নাম হচ্ছে, এমন কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত আছে এমন কোনো ব্যক্তিকে সদস্য নবায়ন করা যাবে না।'

'আর আওয়ামী লীগের কিংবা সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক এ সময় দলের নতুন করে সদস্য হওয়া চেষ্টা করবেন, যারা আমাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না, তারা আমাদের ক্ষতিই করবে। সুতরাং তাদেরকে আমাদের সদস্য করা যাবে না,' বলেন তিনি।

'এজন্য বলতে পারেন দলের লোকের সদস্য সংখ্যা কমে যাবে। আমরা কোয়ালিটিতে বিশ্বাস করি, কোয়ানটিটি নয়। কোয়ালিটি চাই, ভালো লোক চাই। আমাদের হাজার হাজার লোকের দরকার নাই। আমাদের সলিড খুব ১০টা লোক হলে চলবে,' যোগ করেন মির্জা আব্বাস।

দ্রব্যমূল্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'রমজানকে সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে বা বাড়ার প্রস্তুতি চলছে। সিন্ডিকেট তাদের কাজ করেই ‍যাচ্ছে, সিন্ডিকেট তাদের কাজ বন্ধ করেনি। সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সিন্ডিকেটের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং এরা এই সরকারকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।'

'আমরা যতই বলি এই সরকারকে সহযোগিতা করব, করছি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেব না...ততই যেন সিন্ডিকেটের কাজকাম বেড়ে যায়, ততই যেন দুষ্কৃতিকারীরা বেশি আশকারা পাচ্ছে। কেন জানি না অবৈধভাবে সরকারের মধ্যে এমন সব রয়ে গেছে যারা এদেরকে আশকারা দিয়ে বড় করছে,' বলেন তিনি।

অপারেশন ডেভিল হান্ট প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, 'কয়েকদিন আগে অভিযান শুরু হয়েছে ভালো। কিন্তু হাতের সামনে যে ডেভিলরা রয়ে গেছে তাদের ধরছেন না কেন? আজকে যারা সিন্ডিকেট করেছে, যে ডেভিলরা পরিষ্কার ভাষায় আগস্ট মাসের ২ অথবা ৩ তারিখ তৎকালীন খুনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিল, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশ চলবে না, আপনাকে আমরা চাই, সেই ডেভিলরা আপনার কাছে আছে… কেন ধরছেন না।'

'আজকে পত্রিকায় দেখলাম নাম দিয়ে দিয়েছে…নাবিল গ্রুপ ১২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে…তাকে আপনারা গ্রেপ্তার করছেন না। কারণ কী? কোনো একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক আছে। সুতরাং তাকে ধরা যাবে না, তাই না,' বলেন তিনি।

'সবাই শুধু বিএনপির দোষ দেয়' মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, 'আসলে বিএনপি এই পর্যন্ত যতটুকু সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, বিএনপির ছেলেরা যতটুকু ভালো থাকার, ভালো রাখার চেষ্টা করেছে সেদিকে আপনারা কেন নজর দিচ্ছে না।'

'শুধু একটা ফাঁকা বাণী দিচ্ছেন, বিএনপি চাঁদাবাজি করে, চাঁদাবাজি করে। আরে ভাই, চাঁদাবাজি করলে ধরছেন না কেন? জানেনই যখন, ধরেন কোনো আপত্তি নাই, সবাইকে ধরেন,' বলেন তিনি।

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, 'বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে দুয়েকটি রাজনৈতিক দল ও দুয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। যাদের একজন ওই সময়ে অত্যন্ত অশুভ মন্তব্য করেছেন…আরও একজন বলেছিলেন, আমৃত্যু তোমাকে চাই, মৃত্যুর পরেও তোমাকে চাই, পরকালেও তোমার সঙ্গে থাকব...খেয়াল আছে কী? যদি কারও খেয়াল না থাকে, ২-৩ আগস্টের টেলিভিশনের খবরগুলো দয়া করে দেখেন। সবগুলো ডেভিল সবগুলো শয়তানকে পেয়ে যাবেন যাদের উস্কানিতে ৪-৫ তারিখে সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হয়।'

তিনি বলেন, 'যাদের উসকানিতে আজ দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে, যাদের উসকানিতে আমার হাজার হাজার মা-বোনের বুক খালি হয়েছে… তাদের কিছু হচ্ছে না। কারণ ওদের সবার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল, যারা বারবার আমাদের দোষারোপ করে। আসলে নিজের দোষ ঢাকতে দিয়ে বিএনপিকে ওপর দোষারোপ করছে।'

'এখন থেকে আমাদের কাজ হবে ওই ধরনের ভণ্ড রাজনৈতিক দলগুলোকে...যারা কিনা লেবাস পড়ে অন্য দলকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে, তাদের জনগণের সামনে উন্মোচন করে দেওয়া, তাদের প্রকৃত অবস্থা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা,' যোগ করেন মির্জা আব্বাস।

Comments

The Daily Star  | English

Why are onion prices rising abruptly?

Onion prices have been increasing over the past weeks, as farmers and traders release fewer stocks to local markets in the hope of better returns amid the government’s suspension of imports

2h ago