এবারের নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলগুলো কতটা ফ্যাক্টর

কিন্তু এটিও বাস্তবতা যে, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কদর বাড়ে।
amin_al_rashid_on_islamic_parties
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অতি বামপন্থি ও অতি ডানপন্থিরা মিশে একাকার হয়ে গেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন কার যে কী আদর্শ, কে যে কতটুকু বিচ্যুত হলো—সেটাই প্রশ্ন।

যেদিন (১৭ নভেম্বর) তিনি এই মন্তব্য করেছেন, তার ১১ দিনের মাথায় গত ২৮ নভেম্বর রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আহ্বানে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যের আহ্বান নিয়ে এক টেবিলে বসে বিএনপি এবং দেশের ডানপন্থি ও বামধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

একটু পেছনে ফেরা যাক।

এ বছরের শুরুতে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে অর্থাৎ বিজয়ীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী। এই নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থী আমিরুজ্জামান প্রায় ৫০ হাজার ভোট পান—যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের দ্বিগুণেরও বেশি। এই নির্বাচনে জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় তথা ইসলাম নামধারী দলগুলো ক্রমেই ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর বিপরীতে ধীরে ধীরে যে দলটি দেশের ইসলামী তথা ধর্মীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে, সেটি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে তারা অনেক আসনে জয়ী না হলেও ভোটপ্রাপ্তির দিক দিয়ে থাকছে তৃতীয় অবস্থানে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরে এক সময় যে জাতীয় পার্টিকে তৃতীয় প্রধান দল বলা হতো, সেই জায়গাটি দখল করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কেননা, জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান শুধু উত্তরবঙ্গে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন সারা দেশেই সংগঠিত।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলটি ২৯৯টি আসনে প্রার্থী দেয়। একক দল হিসেবে তাদের প্রার্থীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফলেও দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরেই চলে আসছে ইসলামী আন্দোলনের নাম। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও দলটির অবস্থান ছিল তৃতীয়। খুলনা সিটি নির্বাচনেও তারা তৃতীয়। এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরেই ছিলেন এই দলের প্রার্থী।

প্রশ্ন হলো, একটি ধর্মীয় দলের এত বিপুল পরিমাণ ভোট পাওয়া কীসের ইঙ্গিত দেয়? বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও মৌলবাদী বা কট্টর নয় বলে যে জনপ্রিয় কথাটি চালু রয়েছে, সেই ধারণায় কি পরিবর্তন এসেছে? মানুষের মনোজগত এবং ভোটের রাজনীতিতে কি বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে? ধর্ম ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ কি বাড়ছে? যদি বাড়ে, তাহলে এর জন্য কোন কোন ফ্যাক্টর দায়ী? আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো তুলনামূলক উদার গণতান্ত্রিক ও রক্ষণশীল নয়—এমন দলগুলোর কোনো ব্যর্থতা কি ধর্মীয় কোনো দলের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে?

এরকম বাস্তবতায় এবার যে প্রশ্নটি সামনে আসছে তা হলো, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলো কী করছে? বিশেষ করে নিবন্ধন বাতিল হওয়া যে জামায়াতে ইসলামী প্রায় এক দশক 'আউট অন সিন' থাকার পরে সম্প্রতি হঠাৎ করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল এবং ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে সহিংসতার পরে আবার 'হাওয়া' গেলো—সেই দলটিরই বা ভূমিকা কী হবে? এর বাইরে নিবন্ধন থাকা না থাকা অন্যান্য ইসলামী দলগুলো কী করছে?

গত ২৮ নভেম্বর রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আহ্বানে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যের আহ্বান নিয়ে এক টেবিলে বসে বিএনপি এবং দেশের ডানপন্থি ও বামধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সংলাপে দাবি করা হয়, অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি এতে অংশ নিয়েছেন। এতে বিএনপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদের দুই অংশ, গণফোরামের একাংশ, এবি পার্টিসহ সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ, খেলাফত মজলিসও অংশ নেয়। সংলাপ থেকে আগামী ৭ জানুয়ারি হতে যাওয়া সংসদ নির্বাচনের দিন সবাইকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, 'কোনো ইসলামি দল জালেম সরকারের সঙ্গে হাত মেলাবে না।' (প্রথম আলো, ২৮ নভেম্বর ২০২৩)।

তার মানে এটি স্পষ্ট যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কিন্তু এর বাইরে থাকা অন্যান্য ইসলামি দলের ভূমিকা কী?

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গত ২৩ নভেম্বর নয়টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ১৪ জন নেতার একটি প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এর মধ্যে আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ ছাড়া অন্য সবগুলো দলই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য তারা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তারা। (বিডিনিউজ, ২৪ নভেম্বর ২০২৩)।

তার মানে এই দলগুলো আসন্ন নির্বাচনে এককভাবে অথবা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। যারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, তারা নির্বাচনের পক্ষে থাকবে। অর্থাৎ এই দলগুলোর অবস্থান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে ভিন্ন—এটা মোটামুটি পরিষ্কার।

বস্তুত এ মুহূর্তে এককভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো ধর্মভিত্তিক দলের ওই অর্থে কোনো জনভিত্তি নেই। জামায়াতে ইসলামী একসময় বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদার থাকলেও মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে এই দলের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ড; তাদের বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকার ও সরকারের ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়াসহ নানা কারণে কোণঠাসা। তার চেয়ে বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে জামায়াতবিরোধী মনোভাব বেশ সক্রিয়। তার ওপর দলটির নিবন্ধনও নেই। ফলে এই মুহূর্তে জামায়াতের পক্ষে এককভাবে বড় কোনো ঘটনা ঘটানো, অর্থাৎ নির্বাচন প্রতিহত করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি তাদের নিবন্ধন না থাকায় দলীয়ভাবে নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আবার অন্য কোনো দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেও যে জামায়াতের বিপুল সংখ্যক প্রার্থী জয়ী হবেন—তারও কোনো সম্ভাবনা নেই। অতএব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত কী করবে—সেটি মূলত নির্ভর করছে বিএনপি কী করতে চায় সেটার ওপর। এককভাবে বড় কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার মতো শক্তি জামায়াতের আছে কি না—সেটি বিরাট প্রশ্ন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরে অন্যান্য ইসলামি দলগুলো বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় 'দুধভাত'। তাদের বড় কোনো ভোটব্যাংক নেই। বড় কোনো দলের সমর্থন ছাড়া এককভাবে কোনো ইসলামী বা ধর্মভিত্তিক দলের প্রার্থীদের একটি আসনও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাদের আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির রাজনীতি তথা সমঝোতায় যেতে হবে, না হয় বিএনপির সঙ্গে। এমনকি জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করেও কোনো ধর্মভিত্তিক দলের প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৭ সালে জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের উদ্যোগে ৩৪টি দল নিয়ে 'জাতীয় ইসলামি মহাজোট' নামে নতুন একটি জোট গঠন করা হয়েছিল—যার মধ্যে অধিকাংশ দলের নামই দেশের মানুষের কাছে পরিচিত নয়। এরশাদের 'ধর্মচর্চা' নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। ফলে তার নেতৃত্বে যে ধর্মভিত্তিক দলের জোট হয়েছিল, সেটি তার স্বাভাবিক পরিণতিই বরণ করেছে। এই জোটের কথা সম্ভবত এখন আর কারো মনে নেই।

কিন্তু এটিও বাস্তবতা যে, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কদর বাড়ে। এর কারণ প্রধানত দুটি। ১. বড় দুটি দলই দেশের বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেখাতে চায় যে ইসলামপন্থি দলগুলো তাদের সঙ্গে রয়েছে এবং ২. দুটি দলই দেখাতে চায় সংখ্যায় তাদের সঙ্গে কত বেশি দল রয়েছে।

তবে এবারের পরিস্থিতি বেশ ভিন্ন। এবার ধর্মভিত্তিক তথা ইসলামি ও বামপন্থি অনেক দলও ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে এক মঞ্চে বসেছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন 'ডান-বাম একাকার' হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো—ডান-বাম একাকার হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো? স্বাভাবিক হিসাবে ডানপন্থি ও বামপন্থি দলগুলোর নেতাদের এক মঞ্চে বসার কথা নয়। কেননা এই দুটি ধারার রাজনৈতিক দর্শন সম্পূর্ণই বিপরীতধর্মী। সুতরাং সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুটি ধারার রাজনৈতিক দলগুলো যদি সরকারের বিরুদ্ধে এক মঞ্চে বসে একই দাবি উত্থাপন করে, তাহলে ক্ষমতাসীন দল কি সেই দায় এড়াতে পারে? কেন তাদের বিরুদ্ধে ডান-বাম এক হলো, সেই প্রশ্নের উত্তর তো আওয়ামী লীগকেই খুঁজতে হবে। এখানে 'ষড়যন্ত্র' না খুঁজে বরং নিজেদের দুর্বলতা বা দোষ থাকলে সেটি খুঁজে বের করে সমাধানের চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সার কথা হলো, মূলধারার ব্যর্থতায় কট্টরপন্থার বিকাশ হয়। সেটি হতে পারে অতি ডান কিংবা অতি বাম। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভিরু কিংবা ধর্মপরায়ণ তথা বাংলাদেশের সমাজ ও মানসকাঠামোয় ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রভাব থাকায় এখানে বামপন্থা বা অতি বাপমপন্থার বিকাশ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মূলত বাংলাদেশের সমাজে ধর্মের প্রভাব বেশি থাকার কারণে এখানে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো খুব বেশি জনপ্রিয় হতে পারে না। কিন্তু ঠিক যে কারণে এখানে বামপন্থার বিকাশ ঘটে না, সেই একই কারণে এখানে অতি ডানপন্থা এমনকি কট্টরপন্থার বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এখনো ধর্মভিত্তিক দলগুলো এককভাবে সরকার গঠনের মতো বড় এবং শক্তিশালী হয়ে না উঠলেও মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পরিচিতিত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো দলগুলো যদি অব্যাহতভাবে জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হতে থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে ধর্মীয় তথা ইসলামপন্থি দলগুলোর দিতে মানুষের ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ প্রধান দুটি দলের প্রতি মানুষ বিরক্ত হতে থাকলে সেই সুবিধাটা নেবে ইসলামী আন্দোলনের মতো ধর্মভিত্তিক দলগুলো—দীর্ঘমেয়াদে সমাজ ও রাষ্ট্রে যার প্রভাব হবে নেতিবাচক।

ষাট বা সত্তর দশকেও এ দেশে ধর্মীয় দলগুলোর তেমন প্রভাব ছিল না। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোও ধর্মকে নিজেদের রাজনীতি ও ভোটের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে খুব একটা উৎসাহী ছিল না। এমনকি মুক্তিযুদ্ধেরও অন্যতম ভিত্তি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কারণ ধর্মের নামে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর কী ধরনের আচরণ করেছে, সেটি সবার জানা। অথচ দেখা গেল ধর্মনিরপেক্ষতার শক্তিতে স্বাধীন হওয়া একটি রাষ্ট্রের সব প্রধান দলই এখন ধর্মকে তাদের রাজনীতি ও ভোটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কে কতটা ধার্মিক—সেটি প্রমাণে তাদের মধ্যে অলিখিত প্রতিযোগিতা চলে। প্রধান দুটি দলই তাদের নীতি বা নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতির প্রতিফলন ঘটায়। এ সুযোগটিই নিয়েছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো।

আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments