ঢাকায় আমরা সমাবেশ করবই: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত ১০ বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১০ ডিসেম্বর। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এই সমাবেশের অনুমতি, সমাবেশের ভেন্যুসহ নানা বিষয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। পুলিশ বলছে, ঢাকায় বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে।
এ বিষয়ে আজ বুধবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'সমাবেশ আমরা করবই। অনুমতি না দিলেও আমরা সমাবেশ করব।'
'যদিও বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার কোনো কারণই নেই' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুরে আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। আগামী প্রতিটা সমাবেশও শান্তিপূর্ণ হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার অর্থ হবে, সরকার সমস্যা তৈরি করতে চায়। তারা চায় দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে। যদি সরকার অনুমতি না দেয়, এর জন্য যদি কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে তার পুরো দায় সরকারের।'
গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ১০টি বিভাগীয় সদরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় দলটি। 'রাজপথে নিজেদের উপস্থিতি' রাখতে এবং চলমান আন্দোলনের গতি বাড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা অনেক আগে কর্মসূচীর তারিখ ঘোষণা করেছি, আগাম চিঠি দিয়েছি। সুতরাং, অনুমতি না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এখন পর্যন্ত যে কয়টি সমাবেশ করেছি, কোথাও আমাদের তরফ থেকে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। বরং সরকারের তরফ থেকে সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। তারা যা খুশি তাই করে যাচ্ছে।'
সমাবেশকে ঘিরে ঢাকায় যে নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে সে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিরোধী দলকে দমন করতে এটা সরকারের পুরোনো কৌশল। গত ১৪ বছর ধরেই মিথ্যা মামলা, নাশকতার মামলা, গায়েবি মামলা দিয়ে গোটা বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে আওয়ামী লীগ সরকার দমন করছে। সারা দেশেই বিনা কারণে আমাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট খেতে গেছে, সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ঘরে ঘরে পুলিশি তল্লাশি করা হচ্ছে। তারা তো ছুতো খোঁজে। এখন বলছে সমাবেশ হলে নাশকতা হবে। এগুলো ভিত্তিহীন কথা, বিরোধী দল দমনের কৌশল মাত্র। আমার বিরুদ্ধেই তো নাশকতার মিথ্যা মামলা করেছে কমপক্ষে ৩০টি।'
বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে এই সরকার 'বৈধ নয়' এবং 'এই অবৈধ সরকার পতনের' কথা বলা হয়েছে বারবার। অভিযোগ করা হচ্ছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি রাজধানী দখল করতে চায় এবং সরকারের পতন ঘটাতে চায়।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'অবৈধ সরকারকে তো অবৈধই বলতে হবে।সবাই বলবে। তবে ঢাকা দখলের মত কোনো কথা আমাদের দলের কোনো সিনিয়র নেতা কি কখনো বলেছি? রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক সময় অনেকে অনেক কিছুই বলে থাকেন। কিন্তু সেটাতো আর দলের সিদ্ধান্ত নয়। সেটাকে আমলে নেবেন কেন?'
কোনো ধরনের শঙ্কা থেকে কিংবা ফরিদপুরের মতো ঢাকাতেও শহরের বাইরে কোথাও সমাবেশের অনুমতি দিলে সেক্ষেত্রে বিএনপি কি করবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ঢাকার সমাবেশ আমরা শহরের বাইরে করব না। ঢাকা মহানগরীর ভেতরেই করব।'
গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে বিএনপির এই চলমান বিভাগীয় সমাবেশ। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল ও ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে সমাবেশ হয়েছে। আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠিত ৬টি সমাবেশই 'সফল হয়েছে' বলে মনে করছে বিএনপি নেতারা। প্রতিটি সমাবেশই নেতা-কর্মীতে পরিপূর্ণ সভাস্থলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি, সমাবেশের ২-৩ দিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে এসেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশের দিন ও আগের দিন পরিবহন ধর্মঘট হওয়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, পিকআপ, এমনকি হেঁটে তারা এসেছেন সমাবেশস্থলে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে থেকেছেন, রান্না করে খেয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এভাবে সবার সমাবেশের যোগ দেওয়া অপ্রত্যাশিত নয়, নতুন ধারা। বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের যে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, তারই প্রতিফলন এটা। গণতন্ত্রের জন্য, এই সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ কতটা মুখিয়ে আছে এটা তারই প্রতিফলন।'
'মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যেভাবে সবাই সমাবেশে যোগ দিয়েছে, সেটা নিঃসন্দেহে গোটা জাতিকে অভিভূত করেছে। গণতন্ত্র, সাম্য, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন হয়েছে সমাবেশে। দেশের সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে অসহ্য হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম যেভাবে বেড়েছে, সমাজে ন্যায়বিচারের যে অভাব— সব মিলিয়ে মানুষ তো আর সহ্য করতে পারছে না।'
বিএনপির চলমান কর্মসূচী ঢাকার সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখানেই আমাদের সমাবেশ শেষ হবে না। ঢাকার এই সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচী, যৌথ আন্দোলন, দাবি-দাওয়া তুলে ধারতে চাই।'
গত ২৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'ফখরুল শুয়ে আছে টাকার বস্তার ওপর। টাকারে টাকা, দুবাইয়ের টাকা। ফখরুল মহাখুশি। টাকা পেলেই বিএনপি খুশি। টাকার বস্তার বিছানার ওপর ফখরুল শুয়ে আছে।'
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এসব নিয়ে কথা বলা আমার রুচির বাইরে। এসব দুঃখজনক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না, এমন প্রশ্নে জবাব দিতেও লজ্জা লাগে। আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই নিজেদের পয়সা খরচ করে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। সেখানে তারা রান্না করে খাচ্ছে। এটা মওলানা ভাসানির কাগমারি সম্মেলন, সন্তোষ সম্মেলনে যোগ দেওয়া সাধারণ মানুষের সম্মেলনের নতুন একটি রূপ। এটা নতুন এক জাগরণের তৈরি করেছে। তারা ভীত হয়ে অনেক কথা বলছে, যার সামান্যতম কোনো ভিত্তি নেই।'
Comments