কে হত্যা করল নাহিদকে?

গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটে নূরজাহান সুপার মার্কেটের সামনে হেলমেট পরিহিত এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নাহিদকে কোপাতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: স্টার

নিউমার্কেটসহ আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় নূরজাহান সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে নেভি ব্লু টি-শার্ট পরা এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

সেখানে কালো হেলমেট ও ধূসর টি-শার্ট পরা এক যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে নির্বিচারে তাকে কোপাতে থাকেন। লাল টি-শার্ট ও হেলমেট পরা আরেকজন যুবক তাকে বাধা দিতে আসেন। এরপর তারা ফিরে যান ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যটি ধরা পড়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রীরাও ওই ঘটনার ছবি তুলেছেন। নিউমার্কেট থানার কর্মকর্তারাও ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকরা অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ী, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সবাই নেভি ব্লু টি-শার্ট পরা যুবককে ডাটাটেক কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়া (১৮) বলে শনাক্ত করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নাহিদ।

নিহত নাহিদের বাবা নাদিম হোসেনও ভিডিও দেখে তার ছেলেকে শনাক্ত করেছেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সে ডি-লিংক লেখা নেভি ব্লু টি-শার্ট পরে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। ঘটনাক্রমে ২ গ্রুপের মধ্যে পড়ে যায়।'

দ্য ডেইলি স্টার ঘটনাস্থলটিও শনাক্ত করেছে। ঢাকা কলেজের ঠিক বিপরীতে নূরজাহান সুপার মার্কেটের খান ফ্যাশন স্টোরের সামনে ফুটপাতে ২ গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান নাহিদ।

নাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল রাতে দেড় শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন তার চাচা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নাহিদকে কে হত্যা করেছে?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা গ্লোব শপিং সেন্টার ও নূরজাহান মার্কেটসহ কলেজের আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। ডেইলি স্টার গতকাল বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখিয়েছে। তারা বলেছেন, হেলমেট পরা যুবকরা লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে সেদিন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন।

ডেইলি স্টারের ৩ জন প্রতিবেদক সেদিনের ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং তাদের একজন এই পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।

তিনি জানান, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ছুরি ও লোহার রড নিয়ে নূরজাহান মার্কেটের ভেতরে একদল দোকানদারকে ধাওয়া করেন। ছাত্ররা যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তখন সিঁড়ির গোড়ায় ব্লু টি-শার্ট পরা যুবককে পায় এবং বেধড়ক মারধর করে। এরপর কিছুটা দূরে গিয়ে সে পড়ে যায়। 

তিনি বলেন, 'হেলমেট পরা এক যুবক নেভি ব্লু টি-শার্ট পরা যুবককে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় কোপাচ্ছিল।'

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে নূরজাহান মার্কেটের একটি দোকানের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ঢাকা কলেজ গ্রুপের বেশিরভাগ যুবক হেলমেট পরেছিলেন এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যেও অনেকে হেলমেট পরা ছিলেন।

তিনি বলেন, 'দুপুরের দিকে দেখলাম, এক যুবক রাস্তায় পড়ে আছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষের ২ জন যুবক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছিল।'

ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গেও কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার। সংঘর্ষে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী ডেইলি স্টারকে জানান, আঘাতকারী যুবকরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি ঘটনাস্থলও দেখিয়েছেন। তবে হামলাকারীদের নাম বলেননি।

এ ঘটনার আগের রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেটের ২ নম্বর গেটের ৩টি দোকানে ভাঙচুর চালায়। একাধিক ব্যবসায়ী ডেইলি স্টারকে জানান, নিউমার্কেটের ২ নম্বর গেটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ভাঙচুরকারীরাও হেলমেট পরেছিলেন।

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফুয়াদ হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নাহিদকে কারা হত্যা করেছে তা খুঁজে বের করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ।

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্যদের এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হত্যা হয়েছে, তবে এর পেছনে কারা জড়িত তা এখনো পরিষ্কার নয়।'

নাহিদ হত্যার পর ২ দিন পেরিয়ে গেলেও এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। গতকাল মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

7h ago